Search This Blog

নারীর ক্ষমতায়ন বনাম পুরুষতান্ত্রিকতা

Ôডিম আগে না মুরগী আগে?Õ  এই বিতর্কটি সার্বজনীন এবং অমীমাংসিত। ঠিক তেমনি, নারী কি পুরুষের সমকক্ষ? এই বিতর্কটিও বিশ্বজনীন; কিন্তু অমীমাংসিত নয়। শুধু তাই নয়, বিতর্কের ফলাফলও একপাক্ষিক। অর্থাৎ নারী পুরুষের সমকক্ষ কক্ষনোই নয়। সকল সমাজ, সংস্কৃতি সভ্যতায় নারীর অবস্থান পুরুষের চাইতে অনেক অনেক নিচুতে। জেনে রাখা ভাল যে, বিতর্কেরও ফলাফল যারা নির্ধারণ করে তারাও কিন্তু পুরুষ। অর্থাৎ যারা বিচার কাজ সম্পন্ন করে তাঁরা হলেন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, সমাজের বাস্তব দৃষ্টান্ত, সংস্কৃতি, দার্শনিক এবং সমাজ সংস্কারক। এই সবগুলো বিষয়ে পুরুষতান্ত্রিকতার এবং পিতৃতান্ত্রিকতার উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। আর সব সময় ফলাফলের পাল্লা পুরুষের দিকে ভারী হয়। ইতিহাস খুঁজে আজ পর্যন্ত কোন ধর্মের ধর্ম প্রচারক হিসেবে নারীকে পাওয়া যায় নি (অন্তত আমার জানা মতে)। ধর্ম দিয়েই সবচেয়ে বেশি নারীকে নিকৃষ্ট অবস্থানে দেখানো হয়। সংস্কৃতির ত্রী-সীমানায় নারীর পদচারণা নেই (যদিও সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে নারীর হাতে)। পুরুষ তার নিজ স্বার্থে নারীকে প্রকৃতির শেকলে আবদ্ধ করেছে। সভ্যতা বুঝি অসভ্য হয়ে যায় নারীর স্পর্শে। তাই সভ্যতা আজও নারী বিবর্জিত। সমাজ সংস্কারের সিংহভাগই পুরুষ। যদিও কিছু সংখ্যক নারী সমাজ সংস্কারক বিদ্যমান। কিন্তু, সেই সমাজ সংস্কারককে ছাপিয়ে ওঠে পুরুষদের কৃতিত্ব। তাই বাঙ্গালী নারী মুক্তির পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার কাজে তার স্বামী শাখাওয়াত হোসেন এবং তার বড় ভাই ইব্রাহিম হোসেন সাবেরের কৃতিত্ব বেশি করে ফুটে ওঠে। খুব সহজ বাংলায় বললে, বেগম রোকেয়া এই দুই জন পুরুষের সহযোগীতা ছাড়া তাঁর পথচলা সম্ভব হতো না। সত্যিই কি তাই ?

এখন আসি আমাদের বর্তমান সমাজগুলোর দিকে। দৃষ্টি ফেরাই আকাশ সংস্কৃতির (ডিশ এন্টেনা) দিকে। দেখে আসি ভারতীয় হিন্দী সিনেমা। ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে আমাদের সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির আগ্রাসনে ভূলুন্ঠিত। যাই হোক, বোম্বাই এর খুব নামকরা চলচ্চিত্র `চাক দে ইন্ডিয়া’ বাংলা করলে এমন আসে `জেগে ওঠো ইন্ডিয়া’। চলচ্চিত্র নাকি সমাজ জীবনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ফিরে আসি চলচ্চিত্রের গল্পে। গল্পটি আবর্তিত হয় প্রমিলা হকি দল নিয়ে। এই দলটি বিশ্বকাপ হকি খেলতে যাবে। নায়ক (হকি দলের কোচ) সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রমিলা খেলোয়ার বাছাই করে। কিন্ত, হকি বোর্ডের সদস্যরা বলে প্রমিলা হকি দল পাঠিয়ে কোন লাভ নেই। প্রথম পর্ব থেকে ওরা বিদায় নেবে। এই অর্থ শ্রম পুরুষ হকি দলের পিছনে খরচ করাই শ্রেয়। আমাদের নায়ক বীরোচিত ভাবে বোর্ডের সদস্যদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় পুরুষ হকি দল বনাম প্রমিলা হকি দলের খেলার। যদি প্রমিলা হকি দল খেলায় জেতে তবেই তারা বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। যথারীতি তাচ্ছিল্যভরে গ্রহণ করে প্রস্তাবটি বোর্ডের সদস্যরা। খেলা শুরু হয় পরদিন। প্রথমার্ধে তিনটি গোল খায় নায়কের প্রমিলা হকি দল। নাস্তানাবুদ হয় পুরো প্রমিলা দল। দ্বিতীয়ার্ধে নায়কের অনুপ্রেরণায় প্রমিলা দল খুবই ভাল খেলে এবং একটি গোল না খাওয়ায় পাশাপাশি দুটি গোল পরিশোধ করে। শেষ বাঁশি বাজার পর ফলাফল দাড়ায় -২। দ্বিতীয়ার্ধে প্রচন্ড ভাল খেলার পরও পরাজয়ের ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পরে পুরো প্রমিলা দল। বোর্ডের পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শে পুষ্ট সদস্যরা খুবই খুশি। কারন, প্রমিলা হকি দল বিশ্বকাপ খেলতে পারছে না। কিন্তু, পুরুষ হকি দলের সদস্যরা প্রমিলা দলের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তাদের হকি স্টিক তুলে সম্মান জানায়। অর্থাৎ প্রমিলা দল বিশ্বকাপে যেতে পারবে।

এখানে বোঝানো হচ্ছে নারীরা কখনোই নিজের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হতে পারে না। পুরষরাই নারীদেরকে করুণা করে। এটা শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের গল্প নয়; বরং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিত্যদিনের চিত্র। যেটা পুরুষ তার নিজের সুবিধার জন্য প্রতিনিয়ত বিনির্মাণ করে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে চলচ্চিত্রের এই ঘটনার জন্য দায়ী কে? অবশ্যই পরিচালক, গল্পকার। যাঁরা অবশ্যই পুরুষ।

উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা প্রথমপত্রের একটি গল্প হচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’। গল্প শেষ হয় হৈমন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যু দিয়ে। আমরা বন্ধুরা মজা করতাম। বলতাম, হৈমন্তীর মৃত্যুর জন্য দায়ী কে ? উত্তরে বলতাম, ‘রবীন্দ্রনাথ’। একইভাবে যদি প্রশ্ন করি- বিশ্বজনীনভাবে নারীর অধ:স্তনতার জন্য দায়ী কে? উত্তর- অবশ্যই পুরুষ।

পুরুষ তার নিজের জন্যই নারীকে অধ:স্তন করে রাখছে। বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির সকল চ্যানেলের প্রচলিত একটি বিজ্ঞাপন হচ্ছে পুরুষদের রঙ ফর্সা করা ক্রিম- ‘ফেয়ার এ্যান্ড হ্যান্ডসাম’ এর। যেখানে একজন ছেলে মেয়েদের রঙ ফর্সা করা ক্রিম ব্যবহার করে বলে চরম অপদস্থের স্বীকার হচ্ছে। বুঝানো হয় নারীদের ক্রিম ব্যবহার করা অপমানজনক। তাই নারীদের কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। এর মাধ্যমে নারীকে নিচু হিসেবে কি উপস্থাপন করা হয়নি ? লিঙ্গীয় বৈষম্যকে পুঁজি করে আজ কর্পোরেট কোম্পানীগুলো পুঁজি হাতিয়ে নিচ্ছে। এবং এটি এমন সময় ঘটছে যখন সারা বিশ্বব্যাপী লিঙ্গীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে নারীরা তাদের আওয়াজ তুলছে। কিন্তু, পুরুষতান্ত্রিকতার বিনির্মাণ বুঝি চীনের প্রাচীরের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী আবার রাবণের মাথার মত পুনরুৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন।

নিজে একজন পুরুষ হয়েও পুরুষতান্ত্রিকতার নিষ্ঠুর, অত্যাচারী, নৃশংস রুপ দেখে শিউরে উঠি। অপরাধবোধ, পাঁপবোধ ঘিরে রাখছে আমাকে। মার্ক্স যেমন শ্রেণী সংগ্রামের মূলনীতি হিসেবে অর্থনীতিকে দেখিয়েছেন। তেমনি সমাজতান্ত্রিক নারীবাদীদের বক্তব্যে নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীহীনতাকে দায়ী করেন। কিন্তু, আমার চারপাশের নারীদেরকে দেখে বুঝে উঠতে পারি না তাদের কি দরকার? অর্থনৈতিক মুক্তি নাকি পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি?

চলো প্রশ্ন করি

আচ্ছা, অনেক বড় কিছু করতে গেলে কী লাগে? পৃথিবীতে কত বড় বড় মানুষ! কত বড় বড় কাজ! বড় বড় নাম! আর আমি? এখনও বাবা-মা, শিক্ষকরা বলেন, ‘মানুষ হ’! আমিও মানুষ তারাও মানুষ। কিন্তু, সেই মানুষগুলোর সাথে আমার কত আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই ধর, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কথা- বয়সে বুঝি আমার সমান হবে। কিন্তু কোথায় সে আর কোথায় আমি? তাকে সবাই এক নামে চেনে। আর আমি কোথাকার কে? তাকে সবাই পূজা করে (বাংলালিংকের ভাষায়- প্রিয়জনেরা একটু বেশিই পায়।), আর আমাকে খোঁচা মারে! বাংলাদেশের প্রথম সঙ্গীত বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠানের (ক্লোজ আপ ১ তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ) থিম সংহচ্ছে,
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে-
হবে হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ে।

আচ্ছা লক্ষ্যমানে কী স্বপ্ন’? আমারও তো স্বপ্ন আছে। প্রতি রাতে কত হাজারো স্বপ্ন দেখি। কিন্তু, ঘুম ভাঙলেই দেখি বিছানায়- প্রকৃতির প্রবল আহবান! তাহলে স্বপ্নকী? ছোট বেলায় স্বপ্ন নিয়ে একটা লেখায় পড়েছিলাম, ‘মানুষ ঘুমিয়ে যত দীর্ঘ স্বপ্নই দেখুক, তার স্থায়িত্ব ৯ সেকেন্ড! স্বপ্ন নাকি আবার বর্ণান্ধ (কালার ব্লাইন্ড)। স্বপ্নে নাকি রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ নেই। তাহলে স্বপ্ন কী? ঘুম ভাঙলেই দেখি স্বপ্ন টুটে (ভেঙে) যায়। তাহলে স্বপ্ন অটুট হবে কী করে?
আমার এক বন্ধু (বন্ধবী) আছে। সে মনে করে, ‘তার জীবনে কী ঘটবে? তা নাকি আল্লাহ পূর্বেই তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।তাহলে সাকিব আল হাসান, নীল আর্মস্ট্রং, কলম্বাস, স্যার আইজাক নিউটন এদেরও কী সৃষ্টিকর্তা স্বপ্নে এসে বলে দিয়েছিলেন? আমাকে কেন দেন না? আমার কী অপরাধ? আমিও তো অনেক বড় হতে চাই! আমিও অনেক কিছু করতে চাই!

ভারতের ইতিহাসের প্রথম মুসলমান রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবুল কালাম আজাদ এর নাম আমরা সবাই জানি। তিনি ভারতের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীও। তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। তিনি নিম্ন শ্রেণীর মুসলমান ঘরে জন্ম গ্রহণ করেও দেশের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে ছিলেন। তাকে স্কুলে বসতে দেয়া হতো না। তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে স্কুলের ক্লাস করতেন। তিনি অনেক সুন্দর সুন্দর কথার মাধ্যমে তার জীবনের গল্প শুনিয়েছেন। তার স্বপ্ন নিয়ে একটা সুন্দর কথা রয়েছে-
                “ যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ তা স্বপ্ন নয়; যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না তাই স্বপ্ন।
কথাটা আমার খুব প্রিয়। সম্ভবত, এ.পি. জে. আবুল কালাম আজাদ এর স্বপ্ন ছিল এমন। যে স্বপ্ন তাকে ঘুমাতে দিত না। যে স্বপ্নের ফলে তিনি দিনের চব্বিশ ঘন্টা সময়কে টেনে ৪৮ ঘন্টা করেছিলেন। আর তাই আজ তিনি স্বপ্ন দেখেন না। স্বপ্ন দেখান। তাই আমাদেরও তার স্বপ্নের সাথে মিলিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে।
আচ্ছা বুঝলাম, বড় হতে হলে আমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে। যে স্বপ্ন আমাকে খেতে, বসতে, ঘুমাতে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। কিন্তু, কী স্বপ্ন দেখব? কেমন স্বপ্ন? কিসের স্বপ্ন?
আচ্ছা কীভাবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়াতপেলেন? কীভাবে নিউটন মধ্যাকর্ষণশক্তি আবিষ্কার করলেন? কীভাবে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মহাত্মাহলেন? এই ৩ জনের নাম, পরিচয়, ধর্ম এবং দেশ ভিন্ন হলেও তাদের মধ্যে কিন্তু একটা বড় মিল রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে- তারা প্রশ্নকরতে পারতেন। খুবই আশ্চর্য তাই না?
কীভাবে শুধু প্রশ্ন করে একজন সাধারণ মানুষ এত বড় অসাধারণ হতে পারে? আমি ক্লাসে প্রশ্ন করলেই শিক্ষক বলেন, ‘গাধা’! বোকার মত প্রশ্ন করিস কেন? মুখটা তখন কালো হয়ে যায়। মা-বাবাকে প্রশ্ন করলে ধমক দিয়ে বলেন, বেয়াদপ! বড্ড পেঁকে গেছো! তখন মনে মনে কান ধরে বলি, জীবনে আর কখনো কাউকে মরে গেলেও প্রশ্ন কররো না। তাইতো বিশ্বাস হয় না! কীভাবে একজন মানুষ প্রশ্ন করার মাধ্যমে বড় হতে পারে?

 একটু চিন্তা করো। মহানবী (সঃ) এর প্রশ্ন ছিল- আমি কে? কে আমাকে সৃষ্টি করলো? কে এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করলো?’ এই প্রশ্ন তিনি কার কাছে করেছিলেন? হয়তো তার সহপাঠী, বন্ধু কিংবা চাচা অথবা বয়স্ক কারও কাছে। তারা কী করলো?

হাসি ঠাট্টা করল। পাগল ভাবল। তিনি কী প্রশ্ন করা বন্ধ করলেন? না তিনি যখন অন্য কোথাও তার প্রশ্নের উত্তর পেলেন না। তখন তিনি নিজের কাছে প্রশ্ন করলেন? শুধু নিজের কাছে প্রশ্ন করে বসে থাকলেন না। নিজে নিজে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেন এবং প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে হয়ে গেলেন বিশ্বনবী’, ‘মহানবী। অর্থা তিনি প্রশ্ন করলেন নিজের কাছে।
একই ভাবে স্যার আইজাক নিউটন প্রশ্ন করলেন, ‘কেন আপেল নিচে পড়ল? এত জায়গা থাকতে কেন আপেলকে নিচে আসতে হবে? আপেল নিচে নামার প্রশ্নের উত্তর যখন খুঁজে পেলেন তখন তিনি হয়ে গেলেন তার সময়কার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তিনিও বড় হলেন নিজেকে প্রশ্ন এবং উত্তর খোঁজার মাধ্যমে।
মহাত্মা গান্ধী যখন দক্ষিন আফ্রিকায় ছিলেন। তখন তিনি সেখানকার এক রেলস্টেশনে চরম লাঞ্ছনার শিকার হন। সেই রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল,                                                   
       
                        “Dogs and Indians are not allowed

মানুষ হয়েও কেন মানুষের সাথে পশুরমত আচরণ। তার মন কেঁদে উঠল। কেন এমন হবে? তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রচার করলেন অহিংসার বানী। কোন পাশবিক যুদ্ধ, বিগ্রহ, বিদ্রোহ নয়। তাই তো তিনি আজ মহান+আত্মা’= ‘মহাত্মা

বুঝলে, কীভাবে প্রশ্ন মানুষকে বড় করে তোলে! তবে প্রশ্ন অবশ্যই নিজের কাছে। আর একটা বিষয় প্রশ্ন ভুল, অবান্তর বা অযৌক্তিক নয়। প্রশ্ন প্রশ্নই। ভাল প্রশ্ন, খারাপ প্রশ্ন বলে কিছু নেই। তাই মনে কোন দ্বিধা, সংশয়, সন্দেহ এর উদয় হলেই প্রশ্ন করো। আর প্রশ্ন করে বসে থাকলে হবে না। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে, যেভাবেই হোক (by hook or crook)। নুবাবা-মায়ের কাছে অনুরোধ- আপনাদের সন্তান যদি বেশি প্রশ্ন করে। তবে বিরক্ত হবেন না। দয়া করে আপনার সন্তানকে বকবেন না। বরঞ্চ, প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করুন এবং তাকেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবেন। দেখবেন সে নিশ্চয় পারবে এবং ভবিষ্য প্রশ্নের জন্য আপনাকে বিরক্ত করবে না। নিজে নিজেই খুঁজে নেবে।

প্রশ্নের উত্তর খুঁজে কী লাভ? অনেক লাভ! নিজের শক্তি-সামর্থ্য, নিজের সম্পদ-সম্পত্তি, আত্মবিশ্বাস-আত্মতৃপ্তি সবকিছুই খুঁজে পাওয়া যায়- প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাধ্যমে। নিজের হৃদয়ে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়। তাই তো, এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম দৃঢ় চিত্তে বলেন,- ‘পৃথিবীর একজন মানুষও যদি পারে। তাহলে মুসা ইব্রাহিমও পারবে।

প্রশ্নের উত্তর খোঁজা কী খুব সহজ? কক্ষনোই না! তোমার মনে যে প্রশ্ন। তার উত্তর বাজারে প্রচলিত কোন গাইড বইয়ে নেই। যে বাজর থেকে গাইড বই কিনে এনে উত্তর খুঁজে পেলাম। আর মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিলাম। ব্যস, পেয়ে গেলাম গোল্ডেন প্লাস। 

এই প্রশ্নের উত্তর জীবনের পরতে পরতে লুকায়িত। খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্ট সাধ্য। সাপের মাথার মানিকের মত। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পৃথিবীর নিয়ম ভাঙতে হয়। এ.পি.জে. আবুল কালাম আজাদ এর আরেকটি কথায় ফিরে যাই। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম হয় পৃথিবীর নিয়ম মেনে চলতে। আর কিছু মানুষের জন্ম হয় পৃথিবীর নিয়ম ভাঙতে। আমার দরকার নিয়ম ভাঙার মানুষ গুলোকে।

সুতরাং, যা চলে আসছে তাই যে, ‘সত্য’, তা কিন্তু, ঠিক নয়। নতুন কিছু হতে পারে আরো সঠিক বা যর্থার্থ। তাইতো, আমাদেরকে নিয়ম ভাঙার দলে ভিড়তে হবে। ভাবতে হবে নতুন কিছু। হতে হবে সৃজনশীল, কৌশলী। দৃঢ় প্রত্যাশার (প্রত্যয়+আশা)সাথে থাকবে আত্মবিশ্বাস; হতে হবে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ- অবশ্যই নিজের কাছে। হতে হবে পরমতসহিষ্ণু, শ্রদ্ধাশীল, উদার এবং বিশ্বজনীন। নিজেকে ভাঙতে হবে, গড়তে হবে। তাহলে হয়তো পৌঁছে যেত পারবো আমার অটুট লক্ষ্যে।


যাক বড় হওয়ার ট্যাবলেট (সূত্র) আবিষ্কার করে ফেললাম। এখন পানি দিয়ে গিলে দেখি বড় হতে পারি কী না? .....যদি বড় হতে পারি! তাহলে, বড় হওয়ার গল্প শোনাব আর.... একদিন.......।