Search This Blog

বীজ বিদ্যাপীঠের অনেকগুলো ‘না’

শিক্ষা জীবনে শিখে ছিলাম ‘রিজিড’ (rigid) হওয়া যাবে না। উদার হতে হবে, কঠোর হওয়া যাবে না। কিন্তু বীজ বিদ্যাপীঠ এসে শিখলাম কোন একটি দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটু নয় অনেক বেশি রিজিড হতে হয়। বীজ বীদ্যাপীঠে অনেকগুলো ‘না’ শিখবেন।  প্রথম ‘না’ তো আগেই বলেছি ‘এখানে কোক এবং পেপসি খাওয়া নিষেধ’। এগুলো নিষেধ হওয়ার কারণ যতটা না এর স্বাস্থ্যগত দিক তার চেয়ে বেশি। এই কোম্পানি দুটির সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র। পাশপাশি, ইন্ডিয়ায় এই কোম্পানির বিরুদ্ধে ‘নবধান্যিয়া’ সফল আন্দোলনের ইতিহাস। উত্তরাখণ্ডে একটি এলাকায় কোকা কোলা কোম্পানি একটি ফ্যাক্টরি তৈরি করতে গেলে তার আশু প্রভাব পরে এলাকার পানি সম্পদ এবং পরিবেশ এর উপর। সেই সময় নবধান্যিয়া এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে সক্ষম হয়। এখন যাদের বিরুদ্ধে আন্দলোন করা তাদের পণ্য ভোগ করা বা করতে দেয়া স্ববিরোদ্ধিতা। পাশাপাশি এখানে আসা প্রতিটি শিক্ষার্থী এই ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। তাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব পরে এই রিজিড বা কঠোর হওয়ার বদৌলতে।
দ্বিতীয় না হচ্ছে এখানে থালা-বাসন ধোয়ার জন্য কোন ডিটারজেন্ট বা কোন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয় না। এখানে রিঠা ফলকে পানিতে সিদ্ধ করে এক ধরনের তরল তৈরি করা হয়। সেটিই ব্যবহার করা হয়।
প্রথমেই উল্লেখ করেছি, এই খামারের একটি বড় অংশ আম বাগান। সেই আমবাগানের বেশিরভাগ অংশটাই লিজ দেওয়া। রাতে সেখানে প্রায় পটকার আওয়াজ পাওয়া যেত। হঠাৎ হঠাৎ চমকে যেতাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আম বাগানে এই সময় প্রচুর পাখি আসে আর পাখি তাড়ানোর জন্য পটকা (বাজি) ফুটানো হয়। কারণ এই আম বাগানে কোন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার নিষেধ। এমন শর্তেই বাগানটাকে লিজ দেয়া হয়েছে। এই কারণে বাজারের থেকে অনেক কম মুল্যেই লিজ দেয়া হয়েছে। আর  আম বাগানের যে অংশটুকু লিজ দেয়া হয়নি সেখানে পাখি তাড়ানোই হয় না। গাছে আমে ভরপুর গাছে বক পাখির আস্তানা। পাখি আম খাচ্ছে তবুও তাড়ানোর জন্য কোন ধরণের আগ্রহই নেই। এই পাখি গুলো আমে পোকা থেকে রক্ষা করছে।
প্লাস্টিক একদমই না। পুরা খামারে প্লাস্টিক না ব্যবহারের এক ধরণের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যতক্ষণ পারা যায় প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় না। পুরা খামারে কয়েকটি পাপোস এবং টয়লেট পরিষ্কার করার ব্রাশ ছাড়া আর কিছুই প্লাস্টিকের চোখে পরেনি। এমনকি ডাস্টবিনের জন্যও প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় না।
এই বিশাল খামার চাষা করার জন্য ট্র্যাক্টর নয়। গরু টানা লাঙ্গল ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারের চেয়ে শ্রম, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব ব্যবহার করা হয়।
এসি কিংবা ফ্রিজ নেই। পানি ঠান্ডা রাখার জন্য মাটির পাত্র। ফ্রিজ এর চেয়ে টাটকা খাবার এবং সবজিকে উৎসাহ প্রদান করা হয়। অন্যান্য খাবার সংরক্ষণের জন্য ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিক সার, কীটনাশক, দেশীয় জাতের বীজ ছাড়া অন্য কোন বীজ ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রাসয়নিক সারের পরিবর্তে কেঁচো সার, পিট কম্পোস্ট, ম্যানিওর ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক কীটনাশক এর পরিবর্তে পাখি এবং জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
বীজ ঘরের বীজকে ইঁদুর থেকে রক্ষা করার জন্য বিড়াল পোষা হয়। পাশাপাশি বীজ বিদ্যাপীঠের এলাকায় ধূমপান এবং মদ্যপান একদমই নিষেধ।
এই ধরণের কিছু ‘না’ এর মাধ্যমে বীজ বিদ্যাপীঠ এক অনন্য পরিচয় লাভ করেছে। এই সমস্ত ছোট ছোট বিষয়ের সাথে আপোষ না করার ফলে এটি সারা ভারতে এমনকি সারাবিশ্বে অরগানিক খামারের এক আদর্শ উদাহরণ। সারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী এই বীজ বিদ্যাপীঠ এ ইন্টার্নশিপ, স্বেচ্ছাসেবক এবং বিভিন্ন কোর্স করতে আসে।

বীজ বিদ্যাপীঠ এর শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপদ্ধতি

‘নবধান্যিয়া’ শব্দের অর্থ হচ্ছে নয়টি শস্য বীজ। নব=৯ আর ধান্যিয়া= শস্যবীজ। এটি একটি জীব বৈচিত্র্য খামার (Bio-Diversity  Firm)। একই সাথে এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের-নাম ‘বীজ বিদ্যাপীঠ’ ইংরেজিতে বলা হয় ‘Earth University’। এই প্রতিষ্ঠানটির দাবি অনুযায়ী এটি একটি অর্গানিক বা জৈব কৃষি শিক্ষার আদর্শ স্থান।
বীজ বিদ্যাপীঠ এর শিক্ষার্থী মূলত চার ধরনের।
ক) ইন্টার্ন- যাদেরকে কমপক্ষে ১ মাস বিদ্যাপীঠে অবস্থান করতে হবে।
খ) বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষার্থী
গ) স্বেচ্ছাসেবক
ঘ) দর্শনার্থী- যারা এক মাসের কম বিদ্যাপীঠে অবস্থান করে।
এই চার ধরনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম দুই ধরনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন রয়েছে। শিক্ষার ধরণ সম্পূর্ণ হাতে কলমে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক অবস্থান বাধ্যতামূলক। দিন শুরু হয় সকাল ৬ টায়। ৬টায় থেকে ৭টা পর্যন্ত মেডিটেশন। ৭টায় ভেষজ চা। এরপর সকাল ৮টা পর্যন্ত বিরতি। এর মধ্যেই অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করতে হবে। কেননা ৮ থেকেই মূলত শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা শুরু হয়। সকাল ৮ থেকে ৮ টা ৩০ পর্যন্ত সকালের নাস্তা। ৮টা ৪৫ থেকে মর্নিং গ্যাদারিং(সকালের স্মাবেশ)। এই অধিবেশনে অনেক গুলো কাজ করা হয়। প্রথমত, একটি উক্তি এবং সেটির অন্তর্নিহিত বক্তব্য দিয়ে শুরু হয়। তারপর একটি খেলা কিংবা কাজ; যেটি সবাই মিলে যেন করতে পারে। এই অধিবেশনের সবশেষে দিনের সবার একটি প্রার্থনা বা আশা প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ আজ যেন বৃষ্টি হয়, গরম যেন কম পড়ে, প্রভৃতি।
সকাল ৯ টায় শুরু হয় ‘শ্রমদান’। এই শব্দটি মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও দর্শন থেকে নেয়া। ‘শ্রমদান’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। বীজ বিদ্যাপীঠের কোন একটি অংশকে সবাই মিলে পরিষ্কার করার নামই হচ্ছে ‘শ্রমদান’। এটি অবশ্যপালনীয় একটি কাজ। ১০টা থেকে ১২ টা মূলত হাতে-কলমে বীজ বিদ্যপীঠের খামারে কাজ করা। মাঝখানে ১১টায় রয়েছে চা অথবা শরবতের বিরতি। এই ২ ঘণ্টা কাজ করতে হবে খামারে কীভাবে জৈব উপায়ে চাষাবাদ করা যায় সেই জিনিসগুলো। কোন দিন, জমি প্রস্তুত, কোন দিন বীজ সংগ্রহ আবার কোন দিন চারা বা বীজ বপন। এটা শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে করতে হয় না। খামারের কর্মচারীরা যেদিন যে কাজ করে সেই কাজে সহযোগিতা এবং শিখে নেওয়াই এই অধিবেশনের মূল লক্ষ্য। তবে প্রতিদিন যে খামারের কাজে সহযোগিতা করতে হয় এমনটা নয়। নিজে নিজে শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজ করার জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা; যার নাম “জ্ঞান গার্ডেন”।
‘জ্ঞান গার্ডেন’ একটি নাশপাতি গাছকে ঘিরে গোলাকার একটি জায়গার নাম জ্ঞান গার্ডেন। এখানে হাতে-কলমে এবং পঠিত বিষয় শিখে প্রয়োগ করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা হয় বলে এই বাগানের নাম জ্ঞান গার্ডেন। এই বাগানের কোন কাজই খামারের কর্মচারী করেন না। এখানের সব কাজই করতে হয় এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের। মাঠ প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ বপন এমনকি ফসল উত্তোলন করে বিদ্যপীঠে আগত বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের। একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হয়তো বীজ বপন করে গেলো আর এক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এসে হয়তো সেই ফসল উত্তোলন করছে। শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যাপীঠ ত্যাগ করলেও ফোনে কিংবা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খবর রাখে তাদের জ্ঞান গার্ডেনের ফসলের।
১২ টা থেকে ১টা পর্যন্ত গোসল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করার সময়। ১টা থেকে ২ টা দুপুরের খাবার। ২টা থেকে ৩টা বিরতি। ৩টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস বা তাত্ত্বিক আলোচনা। এই সময়ে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৫টায় চা বিরতি এবং ৫ টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ফ্রি সময়। এই সময় খেলাধুলা এবং অন্যান্য বিনোদন এর জন্য। ৮টায় রাতের খাবার। ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আড্ডা, আলোচনা, পড়াশুনা। তবে রাত ১০ টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা হচ্ছে নিরব সময়। এই সময় রুমে বসে পড়াশুনা কিংবা অন্যান্য কাজ করা যাবে। তবে অন্য কারো অসুবিধা হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না।
এই রুটিন পড়ে মনে হতে পারে এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ-পদ্ধতি কোথায়? বীজ বিদ্যাপীঠ ক্লাস রুমভিত্তিক শিক্ষা দানের চেয়ে হাতে-কলমে এবং উন্মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে শিখুক। তাহলে তাদের মধ্যে এই জানার প্রভাবটা গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। আপনি হয়তো দুপুরের খাবার খেতে খেতে কারো সাথে জৈব কৃষির বাজারজাতকরণের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললেন। কিংবা বিকালের চা খেতে খেতে জেনে নিলেন বীজ বিদ্যাপীঠের ইতিহাস এবং দর্শন।
সপ্তাহের কোন দিন কোন বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে সেটিও নির্ধারণ করা আছে এখানে। যেমন ভারতে সপ্তাহ শুরু হয় সোমবারে। আর সোমাবারে শেখার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হবে চিকিৎসা (ভেষজ), মঙ্গলবার বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, বুধবারে দক্ষতা বিনিময়(আপনি হয়তো কোন গান, কিংবা ভালো হাতের কাজ পারেন সেটি সবার সাথে শেয়ার করবেন), বৃহস্পতিবার ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, শুক্রবারে সবাই মিলে রান্না করা, শনিবার মুলত শিক্ষার্থীদের নিজের জন্য (জামাকাপড় পরিষ্কার, নিজের ঘর গোছানো, প্রভৃতি)। আর সবচেয়ে মজার দিন হচ্ছে রবিবার-এদিন শুধুই বিনোদন। ওখনাকার ভাষায় “সানডে-ফানডে”।
এখানকার মূল বিশয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য হয়তো নির্ধারিত একজন আলোচক থাকে; তাছাড়া ওখানের সবার কাছ থেকে আপনি শিখতে পারেন। যিনি জমি চাষ করেন তার কাছ থেকে শিখে নেন কীভাবে জমি প্রস্তুত করতে হয়। যিনি বীজ সংরক্ষণকারী তার কাছ থেকে শিখে নেন বীজ সংরক্ষণ এর বিষয় গুলো। পাশাপাশি এখানে রয়েছে পাঠাগার-আপনি ইচ্ছে হলে সেখানে বসে পড়ে নেন যে বিষয়টি সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে চান।
শেখাটা এখানে তাই পড়া এবং শুনা একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি চর্চা, প্রতিদিনকার নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্য দিয়ে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার বিষয়। আপনি হয়তো কিছু খাচ্ছেন-খাওয়ার মধ্য দিয়ে জেনে নিন কি খাচ্ছেন? কেন খাচ্ছেন? কি খাওয়া উচিত? হয়তো চিন্তা করছেন-এমন কোন চিন্তা করুন যেটি একজন কৃষক করে। পানি খাচ্ছেন খান যেভাবে খাওয়া উচিত-মাটির পাত্রে; বোতলজাত নয়।

কৃষক পেনশন এখন শুধু সময়ের দাবি

বয়স্ক বা প্রবীণ কৃষকদের তাদের দীর্ঘ কর্মময় জীবনের অবদানের স্বীকৃতি এবং পেনশন এর দাবি নিয়ে সম্প্রতি মানিকগঞ্জের প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে হয়ে গেল মত বিনিময় সভা। মত বিনিময় সভায় মানিকগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলার সাধারণ কৃষক-কৃষাণী এবং বিভিন্ন কৃষক সমিতির সদস্য এবং নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে বারসিক পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়। তার বক্তব্যে এই দাবির প্রেক্ষাপট এবং যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনে সম্পূর্ণ অবদান সরাসরি কৃষকের। কিন্তু কৃষক তার উপাদিত পন্যের ন্যায্য দাম পায় না। সে সবসময় বঞ্চিত হয়, কৃষি পেশাকে মর্যাদা দেবার ক্ষেত্রে আমাদের সরকারি-বেসরকারী পর্যায়ে অনেক সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। একজন কৃষককে চাকুরির জন্য অন্যের কাছে যেতে হয়। তার নিজের কর্মসংস্থান এবং আরো অনেকের কর্মসংস্থান করে।
কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে কৃষি উপাদক কৃষকেরই খাদ্যাভাব শুরু হয়। তাকে খাদ্যের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। স্বয়ং কৃষকই তার খাদ্যের স্বাধীনতা হারান। খাদ্য উপাদকই যখন খাদ্য প্রাপ্তিতে শংকাগ্রস্ত হন; তখন নতুন নতুন খাদ্য উপাদক তৈরিতে বাঁধাগ্রস্ত হয়। কৃষক কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহ হারান। নতুন নতুন কৃষক তৈরি না হয়ে কৃষক সন্তান বিকল্প কর্মসংস্থানে চলে যেতে থাকে। কৃষি ব্যবস্থায় এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করে। বাণিজ্যিক কৃষিতে মানুষ ধাবিত হয়। ফলে কৃষিতে আর কৃষকের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। পুরো ব্যবস্থায় একজন কৃষক ক্রমাগত কৃষি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে এবং একই সাথে বঞ্চিত হচ্ছে সকল ক্ষেত্র থেকে।
মানিকগঞ্জ এর কৃষক সমাজের পক্ষ হতে আমাদের আহবান বাংলাদেশের খাদ্য উপাদনে যে কোন প্রতিকুলতার মধ্যেও কৃষকের সক্রিয় ভূমিকা থাকায় প্রবীণ কৃষকের খাদ্য ও চিকিসা নিরাপত্তার লক্ষ্যে তার প্রবীণ অবস্থায় রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃতি হিসেবে ‘কৃষক পেনশন’ চালু করা অতি জরুরি’।
আলোচক এর বক্তব্যে বারসিক এর নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষকের অবদান থাকা স্বত্বেও কীভাবে প্রতি পদে পদে প্রতারিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “সরকার যেমন কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়, ঠিক তেমনি একজন কৃষকও ভর্তুকি দেন।” তিনি বলেন, “একজন কৃষক তার ফসলের উপাদন মুল্য এবং বিক্রয়মুল্যের ক্ষেত্রে প্রতিমণে প্রায় ২০০ টাকা ভর্তুকি দেয়। সে হিসেবে রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ভর্তুকি দেন একজন কৃষক। কিন্তু তার এই অবদানের যেমন কোন প্রতিদান দান দূরে থাক স্বীকৃতিও নেই!
অন্যদিকে বাণিজ্যিক কৃষির ফলে কৃষক প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছে। উদাহরণ হিসবে তিনি বলেন, “একজন কৃষক উপাদন করেন ২৮ জাতের ধান। এই চালের বাজারমূল্য ২৫-৩৫ টাকা। কিন্তু এই চালই মধ্যস্বত্ব ভোগীরা মেশিনে কেটে মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করছে; আর জার বাজার মূল্য ৪০-৫০ টাকা। কিন্তু এরা কোনভাবেই উপাদক নয়; কিন্তুই তারাই লাভবান হচ্ছে। একই সাথে প্রতারিত হচ্ছে তাদের উপাদিত ২৮ ধানের নাম থাকছে না হয়ে যাচ্ছে মিনিকেট। আমরা ভোক্তা শ্রেণীও হচ্ছি প্রতারিত।
সুকান্ত সেন তাঁর আলোচনায় বলেন, নতুন প্রজন্ম যেমন কৃষক হিসেবে পেশাকে বেছে নিচ্ছে না; তেমনি বয়স্ক কৃষকরা বাধ্য হচ্ছেন দীর্ঘ দিন ধরে কৃষি কাজকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ২০ বছর আগে যেখানে কৃষকদের গড় বয়স ছিল ৬০ থেকে ৬৩ বছর। বর্তমানে এখন সেটি ৭৫-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবীণ হিসেবে একদিকে যেমন রয়েছে বার্ধ্যকের শারীরিক-মানসিক কষ্ট। সেখানে আবার বাড়তি খাদ্যের চাহিদা চাপিয়ে দিচ্ছি। আমাদের খাবারের নিশ্চয়তা চাপিয়ে দিচ্ছি এই সমস্ত প্রবীণ কৃষকদের। তিনি বলেন, “তাই এই কৃষকদের জন্য কৃষক পেনশন এখন সময়ের দাবি। সরকার যে প্রবীণ ভাতা দেয় সেটা যেমন সকল কৃষক পায় না। ঠিক তেমনি সেটি যথেষ্টও নয়। প্রবীণদের এক মাসের ওষুধের খরচই হয় না। তাই কৃষকদের স্বীকৃতির জন্য আমরা কৃষকদের পেনশনের দাবটাকে জাতীয়ভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছি।”
অন্যদিকে এ্যডভোকেট আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, “কৃষকরাও যে তাদের উপাদিত শস্যে ভর্তুকি দেয় সেটি যেমন সরকার জানায় না। তেমনি কৃষকরা নিজেরাও জানে না। অন্যদিকে সরকার যে সমস্ত ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয় সেটি সরাসরি কৃষকের কাজে আসে না। সরকার ভর্তুকি দেয় সার, বিষ, তেল এবং ট্রাক্টরে। এগুলো তো কৃষকের লাভবান করে বরং গ্রামে এক ধরণের ব্যবসায়ীদের সৃষ্টি করছে। গ্রামে গ্রামে কলের লাঙলের ব্যবসায়ী, পানি, বীজ, বিষ, তেল সব কিছুর ব্যবসয়ী আছে। কৃষকদের এই সব কিছু এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে হয়। আমরা দাবি করছি না যে সব কৃষককে একসাথে এই পেনশন দিতে হবে। কিন্তু সীমিত আকারে হলেও শুরু করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “এই দাবির জন্য একটি সার্বজনীন কমিটি করতে হবে-আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য। প্রথমে জেলা পর্যায়ে এই ধরনের দাবি তুলে ঢাকা পর্যায়ে একটি কনভেনশন করতে হবে। জাতীয়ভাবে একটি আন্দোলন কমিটি করতে হবে। কৃষক পেনশন এখন শুধু সময়ের দাবি।” মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “কোন দাবিই অযৌক্তিক নয়। এখনকার সবকিছুই আন্দোলন সংগ্রামের ফল। অনেকেই বলতে পারেন-কৃষকদের জন্য আবার পেনশন কেন? একসময় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা প্রভৃতি ছিল হাস্যকর। কিন্তু এখন তো সব স্বাভাবিক। একসময় কৃষকদের পেনশনও স্বাভাবিক হিসেবে মনে হবে। সাংবাদিক হিসেবে এই দাবির সাথে একাত্মতা জানাচ্ছি।
কৃষক নেতা সেতোয়ার হোসেন বলেন, “পাফাটা মেহনতি কৃষকের কিছু নেই। আমরা কৃষকরা বিপদে পড়েছি। কৃষক পেনশন অত্যন্ত জরুরি। সরকার কি করবে জানি না। তবে আমাদের এই অধিকার আদায়ের জন্য জোট বাঁধতে হবে।
রাষ্ট্রপতি পদক প্রাপ্ত প্রবীণ কৃষক শরীফ আলী বলেন, “মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি সার, বীজ, কীটনাশকসহ সবকিছুতে দখল করে আমাদের পরনির্ভরশীল করে তুলছে। কাঠের লাঙলের জায়গা দখল করেছে ইঞ্জিন লাঙ্গল। কৃষি ক্ষেত্রে নেই কোন ব্যবস্থাপনা। আমরা যারা কৃষক তারা আজ হযবরল অবস্থাতে আছি। ৬০ বছর পরে আমাদের যখন কর্মসংস্থান থাকবে না-তখন আমদের কি হবে? তাই কৃষক পেনশন প্রথা অবশ্যই চালু হওয়া দরকার।
কৃষক নেতা দুলাল বলেন, “কৃষক পেনশন এর দাবি কিছুটা ব্যতিক্রম লাগলেও; এটি এখন সময়ের দাবি। সারা দেশে নিয়মিত ও অনিয়মিত কৃষক আছে প্রায় ৬ কোটি। বিপরীতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে মাত্র ১২ লাখ। ৬ কোটি মানুষের স্বার্থ বিবেচনা না করে সরকার ১২ লাখকে বড় করে দেখছে। কৃষকের পেনশনের জন্য বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রে বেশি বরাদ্দ করতে হবে। কৃষকের পেনশন দাবিকে জোরদার করার জন্য হাট বাজার, গ্রাম সভায় প্রচারণা চালিয়ে আরো মানুষকে সচেতন করতে হবে।”
কৃষাণী সাফিয়া বেগম বলেন, “যখনই কোন সুবিধা আসে সেটি কেউ পায়, কেউ পায় না। সবাই যেন পায় সে বিষয়ে সরকারকে দেখতে হবে। সরকারের কাছেই একটাই দাবি কৃষকদের যেন মূল্যায়ন করে, দাম দেয়।”
কৃষক আব্দুস ছালাম বলেন, “গরিব বয়স্করা বয়স্ক ভাতা পায়। কিন্তু সকল কৃষক সেই ভাতার আওতায় আসে না। তাই কৃষকদের পেনশন আমাদের জন্য খুব জরুরি। একজন চাকরিজীবী ২০-৩০ বছর কাজ করলেই পেনশন পায়। কিন্তু আমরা ৪০-৫০ বছর ধরে এত কিছু করলাম। কিন্তু আমাদের (পেনশন) কই? আমরা সকল গ্রামের কৃষকরা যদি একসাথে কথা বলতে পারি তাহলে আমাদের এই দাবী সরকারের কাছে পৌঁছাতে পারবো।”
আলোচক মোসলেমউদ্দিন বলেন, “আমাদের সবকিছু আজকে না হয়ে কালকে হলেও চলে। কিন্তু খাদ্য না হলে চলে না। আর এই খাদ্য যারা যোগান দেয় সেই কৃষক একটা বয়সের পরে তার নিজেরই খাদ্য থাকে না। তাই প্রবীণ কৃষকদের জন্য আমরা কৃষক পেনশন দাবি করছি। আমরা আমাদের টাকা থেকেই আমাদের পেনশন দাবি করছি। আমরা প্রতিদিন জিনিস কিনে যে ভ্যাট ও ট্যাক্স দেই সেখান থেকে সঞ্চিত অর্থ থেকেই-কৃষক পেনশন চাচ্ছি।
কৃষক লীগ এর সদস্য সচিব জাগীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ বলেন, বয়স্ক ভাতা আছে কিন্তু কৃষক হিসেবে আলাদা কোন ভাতা নেই। ৬০ বছরেই ভাতা দিতে হবে এমন কোন দাবি আমরা করছি না। ৬০ বছরে না দেন ৭০ বা ৭৫ দেন। পদক্ষেপটা ভালো, সফল হলেও আরো ভালো।

“পুরাতন জিসিন কি ডিম পাড়ে?”- আসুন বেঁচে দিই!

বছরখানিক আগে টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন বেশ চোখে লেগেছিল, কানে বেজেছিল। আর সেটি হল বিক্রয় ডটকমের ‘পুরনো জিনিস কি আর ডিম পাড়ে? ছবি তুলুন, পোস্ট করুণ আর বেচে দিন’। একই সময়ে ভারতীয় টেলিভিশনগুলোতে একই ধরণের বিজ্ঞাপন ‘পুরনো জিনিস কে ধরে না রেখে বেচে দিন।’-OLX.COM এর। সত্যিই তো পুরনো জিনিস কি ডিম পাড়ে? সুতরাং তাকে বেচে দিন?
পুরনো জিনিসের কি ডিম পাড়া ছাড়া আর কোন মূল্য নেই? আপনার বাবার দেয়া জীবনের প্রথম ‘ঘড়ি’; হাতে দিতে পারেন না-ওল্ড ফ্যাশান বলে! কি আর করা বেচে দিন। আপনার বিয়ের প্রথম লাল টুকটুকে ৪০ বছরের পুরনো শাড়ী-কি আর কাজে লাগবে? বেঁচে দিন। আমার বাবার একটি ৩৭ বছরের পুরনো সাইকেল আছে-আমারই চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তবু বাবা সাইকেলটা এখনো চালান। সাইকেলটা তার শ্বশুর তার বিয়ের সময় তাকে উপহার দিয়েছিলেন। সাইকেলটা তো আর নতুন সাইকেল দেবে না! বরং মেইনটেনেন্সের জন্য প্রতিনিয়ত খরচ হবে। আমার বাবা কি সেটা বেচে দেবে? বেঁচে থাকতে তো নয়ই।

পুরনো মূল্যবোধ, সংস্কার, ভালোবাসা, বিশ্বাস-আস্থা ধরে রেখে লাভ কি বেচে দিই। ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি, শুনে এসেছি, শিখে এসেছি এবং বেচে এসেছি পুরনো জিনিস। পুরনো ছেড়া-ফাটা, ভাঙ্গাচুরা জিনিস দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে চকলেট, আইসক্রিম, পাঁপড় ভাজা কিংবা বিনিময়ে মা-চাচীরা নিয়েছে ঘরের প্রয়োজনীয় হাড়ি-পাতিল। এগুলোর কি কোন প্রভাব নেই আমাদের জীবনে? এর বিন্দুমাত্রা রেশ কি নেই আমাদের মগজে?
এগুলো দেখতে-দেখতে, শুনতে-শুনতে আর করতে করতে যখন আমাদের নিজেদের জীবনে কোন পুরাতন, বৃদ্ধ, জরাজীর্ণ ঘরের মানুষকে দেখি-যারা হয়তো আপনার আমার বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানী যারা সারাদিন ঘরের কোনে বসে থাকে; ডিম পাড়ার জন্য। কিন্তু দিন শেষে কোন ডিমই পারে না। তখন কি বলতে ইচ্ছে করে না-ধুর এই বুড়া গুলো তো ঘরে বসে ডিমও পারে না; বেঁচে দিই বিক্রয় ডট কম কিংবা ওএলএক্স ডট কমের মতো কোন কম্পানি কিংবা ফেরিওয়ালার কাছে। জায়গাও বাঁচল, ঝামেলাও কমলো। সেই ফেরিওয়ালা হয়তো কোন ওল্ড এজড হোম কিংবা বৃদ্ধাশ্রম। কিংবা আমাদের বৃদ্ধ মানুষ বেচার মতো কোন কোম্পানি নেই বলে হয়তো ফেলে রাখি বাড়ির সবচেয়ে অন্ধকার ঘুপচি ঘরটিতে। কোন যত্ন নেই, আদর নেই, খোঁজ খবর নেই। পুরনো মানুষটার পিছনে যে অর্থ আর ওষুধ খরচ হয় সেটাও বুঝি বৃথা অপচয়।
ভাবছেন আমার কথার কোন ভিত্তি নেই। ভেবে দেখুন, আপনার বাসার পুরাতন দৈনিক পত্রিকাগুলো কি করেন ফেলে রাখেন সবচেয়ে অন্ধকারের ঘুপচিতে। তারপর যখন আর জায়গা হয় না তখন বেঁচে দেন কাগজওয়ালার কাছে। বাসার যত পুরাতন অব্যবহার্য, কাজে লাগে না এমন জিনিস আপনি কি বেঁচে দেন না একেবারে নামমাত্র মুল্যে? তাহলে ঠিক সেই একই আচরণ কি করেন না বাড়ির সবচেয়ে পুরাতন সদস্য-যিনি কোন কাজের না, বাসার জায়গার অপচয়। হয়তো সে আপনার আপনজন বলে বেচতে পারছেন না। কিংবা বেচার কোন সুযোগ নেই বলে হয়তো। জানি না যদি কোন দিন সুযোগ তৈরি হয়-তাহলে আমিও হয়তো বেচে দিতে পারি আমার পরিবারের পুরাতন সদস্যকে!
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বাসার পুরাতন জিনিস আর পুরাতন/বৃদ্ধ মানুষ কি এক? নিশ্চয় না। কিন্তু এই যে পুরনো জিনিসের প্রতি আমাদের দীর্ঘ দিনের আচরণ, অভিব্যক্তি, ব্যাখ্যা কি কোন প্রভাব ফেলে না আমাদের মানুষের সাথে আচরণ কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে? বা আমাদের মনস্তত্ত্বে? যদি আপনার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়। তাহলে অবশ্যই সেটা মারাত্মক।
দ্বিতীয় আর একটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে। এই পুরনো জিনিসগুলো নিয়ে আমরা কি করবো? কোন কাজে লাগে না আবার অনেকখানি জায়গা নষ্ট হয়। বেচে দিলেই তো ভালো। একবারও কি ভেবেছেন আপনার এই পুরাতন, অকাজের জিনিসগুলো যারা নামমাত্র মুল্য দিয়ে কিনে নেয়- তারা কি করে? তারা কি আপনার মতো ফেলে রাখে? কক্ষনো নয়। সেটাকে কাজে লাগায়, ব্যবহার করে। কক্ষনো একটু মেরামত করে কিংবা একবারে রিসাইকেলিং করে ভিন্ন কিছু তৈরি করে ব্যবহার করে। কিন্তু আপনি কি কক্ষনো আপনার পুরাতন জিনিসটাকে রিসাইকেলিং করে ব্যবহার করার কথা ভেবেছেন? কিংবা আপনার সন্তানককে কি শিখিয়েছেন? যদি উত্তর ‘না’ হয় তাহলে-সে কীভাবে শিখবে যে পুরাতন জিনিসেরও মূল্য আছে। পুরাতন জিনিসের যেমন মূল্য আছে তেমনি মূল্য আছে আপনার পরিবারের সবচেয়ে পুরাতন সদস্যেরও। তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং দেখাশুনার অশেষ মূল্য আছে আপনার এবং আপনার পরিবারে।

আপনার পরিবারের সকলেই ব্যস্ত। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যকে সময় দেয়ার কেউ নেই। আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্য হতে পারে সবচয়ে কার্যকরী। আপনার বাসায় কাজের লোক আছে কিন্তু আপনার স্কুল পড়ুয়া ছোট সন্তানকে বাসায় রেখে যেতে পারছেন না। শুধু যদি একজন প্রবীণ সদস্য থাকে তাহলে এই জটিল সমস্যার সমাধান নিমিষেই হবে। আপনার ছোট কংক্রিটের বাসাটা সবুজ আর প্রাণে ভরে তুলতে পারেন প্রবীণ সদস্যটি। নাগরিক ব্যস্ততা আর সমস্যায় একবারে বিপর্যস্ত। একটুও শান্তি পাচ্ছেন না। কারোর সাথে শেয়ার করতে পারছেন না। আপনার প্রবীণ অভিজ্ঞ বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানি অথবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে একটু সময় কাটান, মন খুলে গল্প করুন। জানি তিনি হয়তো আপনার সমস্যার সমাধান করে দেবেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত আপনি কিছু অনুপ্রেরণা আর সাহস পাবেন। নতুন আত্মবিশ্বাসে ভরে উঠবেন। হয়ে উঠবেন এক নতুন আপনি।
একটু ভাবুন বাড়ির পুরাতন জিনিসটার যেমন হয়ে উঠতে পারে মূল্যবান। ঠিক তেমনি আপনারা পরিবারের প্রবীণ সদস্যও কম মুল্যবান নয়। আপনিও যেমন বিষয়টা আমল করবেন। তেমন করে শেখান আপনার সন্তানকেও। নতুবা আমি আপনিও হয়ে যাবো প্রবীণ-পুরাতন এক বৃদ্ধ। তখন আপনার আমার সন্তান যেন আমাদেরকে পুরাতন ভেবে বেচে না দেয়-‘ডিম পাড়ি না বলে!’

আপন রঙ

আপন রঙ এ হাত রাঙ্গিয়ে,
তোর গালটা আলতো ছুই।
সব রঙ্গকে ছাপিয়ে পাগলী-
গোধুলী রাঙা আকাশ যে তুই।

ছড়া-৩

ঘাস ফড়িং এর জন্য আমার মনটা কেমন করে-
মাঝে মাঝে হঠাৎ আসিস ধূসর সফেদ ঘরে।
সিন্ধু আমি বিন্দু খুঁজি ধূ ধূ মরুর বুকে-
আমি কেবল কেঁদে মরি অস্থির অজানা শোকে।

ছড়া-২

আমি যদি হারিয়ে যাই- বিলিন হই তোর বুকে, 
লেগে আছে চুমুর স্বাদ-বিস্বাদ হয়ে অমলিন এই ঠোটে।

ছড়া-১

সুখের ঘরে হঠাৎ করে
আসলো সুখের পাখি
ঘুম জড়িয়ে আসছে আখি
ক্যামনে তোরে দেখবো পাখি।।
..............
মনের মাঝে অকস্মাত
মন দিল যে ধাক্কা
আমি জানি কি বা না জানি
এ যে মনের ভুল পাক্কা।

চোখ ভিজে যায়

আজকাল সবকিছুতেই কেন জানি চোখ ভিজে যায়...
সুখে কান্না আসে, দুখে কান্না আসে...
কিংবা কক্ষনো কোন কারণ ছাড়াই বুক ভাসে।
বই পড়ে কান্না আসে, সিনেমা দেখে কান্না আসে...
গল্পে কান্না আসে, স্মৃতি রোমন্থনে কান্না আসে...
রাগে-অনুরাগে, মান- অভিমানে চোখের বান ভাসে।
কিন্তু, যখন কান্না শেষ করে চোখ মুছতে যাই...
দেখি চোখের কোণ টা খটখটে শুকনো...
আজকাল আমার সবকিছুতেই নাকি কান্না আসে?

।।। ভুল ।।।

কোন এক ভুল সময়ে, ভুল তিথি, ভুল ক্ষনে জন্ম আমার।
ভুল মানুষের সাথে নিত্য বসবাস,
আজন্ম ভুল পথ, ভুল মতাদর্শে চলি-
অন্তহীন ভুল গন্তব্যে।
ভুল পরামর্শে, ভুল উপদেশ শুনে নিই-
এক গভীর অতল ভুল সিদ্ধান্ত।
আজন্ম মেতেছি আমি ভুল ভালবাসায়,
মরিচিকায় আর ভুল আলেয়ায়।
৩০ বছর শেষে খেরো খাতা খুলে দেখি
জমা-খরচ ভরে আছে বিশাল এক ভুলে।
কিংবা হয়তো আমি নিজেই একটা মস্ত ভুল।
বাস করি ভুল কোন দেহে কিংবা আত্মায়।

আকাল

তুমিই আমার অজন্মা আকাল,
প্রতিক্ষায় কাটিয়ে দেয়া নির্ঘুম রাতের সকাল।
তপ্ত দুপুর ক্লান্ত বিকাল শেষে স্নিগ্ধ গোধুলী।
তুমি আমার খুচরো টাকা ঝনঝনানো আধুলি।
হবে না জেনেই অন্ধ জ্ঞানে হাতে বাধা মাদুলি।

~আমার মাঝে আগুন ছিল~

নিকট অতীতে সাবাই বলতো-
আমার মাঝে নাকি আগুন আছে!
তাদের সেই মৃদু বাতাসে আমি
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতাম।
নিজে জ্বলতাম; আরো দশ জনকে জ্বালাতম,
আশপাশের ময়লা- আবর্জনাকে পুড়িয়ে দিতে
চাইতাম নিমিষেই- স্বপ্নিল পৃথিবীর প্রত্যাশায়।
আমিও বিশ্বাস করতাম যে-
আমার মাঝে নাকি আগুন আছে!
আর বর্তমানে আমি মিইয়ে যাওয়া মুড়ি!
কিংবা ন্যাতানো, প্যাচানো এক নেতা।
না কোন কামের কিংবা কামের।
আমার ভিতরে সেই আগুন
আর আমিই খুঁজেই পাই না।
ভাবি, সত্যই কি আমার মাঝে আগুন ছিল?
নাকি সবই ধোঁয়া, ধোঁয়াশার ধুম্রজাল।
আমার আগুনে কে জানি পানি ঢেলে দিয়েছে।
আমার মাঝে আর সেই আগুন নেই।
তীব্র শীতে কিংবা ঘোর বরষায়-
আগুন মা'গি ভিক্ষায়।

কেন্নো

আমি গুঁটিয়ে যাওয়া কেন্নো-
কিংবা লুটিয়ে পড়া লজ্জাবতী।
তোমার আলতো ছোঁয়ায় মিইয়ে যাই-
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমার এমনই।

BIAS’s regional course on: CLIMATE CHANGE, DIVERSITY AND INTERDEPENDENCY

By Bahauddin Bahar
Global warming and climate change is most important and discursive issue globally. Bangladesh is more vulnerable to climate change due to its geophysical location and economic condition. Climate change as well as human unplanned interference has been one the reasons for the decline and lost interrelation and interdependent relationship among humans, plants and other living and non-living subjects and objects. However, to revive the interrelation and increase interdependent relationship among humans, plants and other elements of the nature awareness among people and study and research to unveil to cause of lost interrelation and interdependent relationship is needed. Bearing this mind and with the objective to familiarize,  educate and inform the new generation regarding the importance of interdependency and diversity BIAS has just completed its 10 days certificate course on “Climate Change, Diversity and Interdependency” with the help of Student Union of University of Helsinki. The course which took place at Heritage: Archives of Bangladesh History Trust, Kazla Rajshahi started from 1st December and ended on 10 December, 2016. The Course was inaugurated by Parvez Raihan, Addition District Commissioner (Education & ICT), Rajshai.
Course was especially designed for Rajshai; which is known as Barendra region. It has unique geographical characteristics. The impacts of climate change are clearly visible in agriculture, livelihood and environmental patterns of this region as well. It is believed that in order to mitigate as well as invent the adaptive techniques to climate change the youth of this region could play a vital role. From this backdrop, the course was designed to educate, inform and motivate them playing their parts to fight with climate change impacts.
The course which aimed to unlock the potentiality as well as make the youth active and responsive towards changes in their perspective areas was escorted by 23 participants 8 educational institutes of Rajshai and Chapai Nawabganj districts. Among them 13 are female and 10 are male. The participants are also from different disciplines i.e. e from 14 different subjects. Besides, most of them  are graduation and post -graduation level students along with  t 5 part-time service holders.
Nonetheless, 9 faculties such as dept. of Anthropology, University of Rajshahi and BARCIK and BIAS took part in 14 different sessions within 6 themes in this course. The themes include: Introduction to Climate Change and related Terminology, Climate Change and Vulnerable Groups, Climate Change and Relation with Nature, Climate Change: Indigenous Knowledge, Climate Change and Development, Climate Change: Youth Roles.
During the 10 days course participants did 2-days field works to experience and practically learn climate change and its impact from natural resources dependent community including theoretical discussions. The participants also practiced social research tools and techniques during the course to sharpen their skills on research.
As soon as the theoretical and practical parts of the course ended BIAS requested individual research proposal from the participants. BIAS after properly screening the proposals will provide scholarship and guideline to the participants to conduct their research works whose proposals have been selected.         
The closing session of the course was held by giving certificates to participants who successfully completed the course. Professor Dr. Muhammad Mizanuddin, Hon’ble Vice Chancellor, University of Rajshahi attended in the closing ceremony as chief guest. On the other hand, Professor Dr. Mahbubur Rahman, Chairman, Heritage: Archives of Bnagladesh History Trust attended as special guest and Executive Director of BARCIK Mr. Sukanta Sen, attended as Chair. Besides, BIAS honored chief guest and special guest with crest as a token of thanks.
It is to mention that the main achievement of this course is commitment of participants for fighting with climate change impacts through playing active roles taking appropriate initiatives of their own and changing their attitudes.

Making Subtitle


জ্বলছে আগুন বস্তিতে

আগুন জ্বালাই শীতের মাঝে-
আগুন জ্বালাই সস্তিতে;
পুড়ছে সবই, উড়ছে ধোয়া
জ্বলছে আগুন বস্তিতে।
জ্বলছে আগুন সান্তাল গায়
পুড়ছে যে ধান খই হয়ে-
পুড়ছে কপাল আগুন বিনে
মানবতা যায় ক্ষয়ে।
জ্বলছে আগুন গার্মেন্টসএ
পুড়ছে দেখ বাজার-মল।
জ্বলছে আগুন, পুড়ছে যে সব
যাচ্ছে পুড়ে মনোবল।

আগুন ছিল

বুকের ভিতর আগুন ছিল
আগুন ছিল দৃষ্টিতে;
চোখের আগুন ঝরতো শুধুই-
আশ্রু জলের বৃষ্টিতে।
ঠোটের মাঝে আগুন ছিল
ভালোবাসা সৃষ্টিতে,
মাথার ভেতর আগুন গুলো
প্রকাশ পেতো কৃষ্টিতে।
মুখের কথা উঠতো হয়ে
অগ্নিঝরা বক্তৃতায়-
হাত যে হতো অগ্নিগোলক
ভাঙা গড়ার মগ্নতায়।
Image may contain: plant, flower, nature and outdoor

“এ্যানিমেলস ইউনাইটেড” : মানুষের কর্তৃত্বের উপর প্রাণ – প্রকৃতির প্রতিরোধ

“কিছু অদ্ভুত চরিত্রের, কুৎসিত জীব, নগ্ন, লোমহীন, রক্ত পিপাসু, ভয়ঙ্কর পশু। যারা নিজেদেরকে মানুষ বলে থাকে।” মানুষকে এভাবে সজ্ঞায়ন করে ‘এ্যানিমেলস ইউনাইটেড (২০১০)’ আ্যনিমেশন চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটিতে আফ্রিকান এলাকার একটি জঙ্গল এর কিছু প্রাণী তাদের প্রাকৃতিক পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেয়ার জন্য সকল প্রাণীর সংঘবদ্ধ হওয়ার গল্প বলা হয়েছে হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনের মাধ্যমে। এই এলাকার প্রাণীদের সাথে যুক্ত হয় কিছু জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রাণী। যারা হাজারো পথ পাড়ি দিয়ে আসে আফ্রিকান এই জঙ্গলে প্রাণীদের জন্য স্বর্গ ভেবে। কিন্তু এখানে এসে তারা বুঝতে পারে আসলে পালানোর কোন উপায় নেই। সবখানেই পেীঁছে গেছে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। তাই আর পালানো নয়; বরঞ্চ বুঝে নিতে হবে নিজেদের অধিকারটুকু। সেই অধিকার আদায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রানীদের একাত্মতা হওয়ার গল্প ‘এ্যানিমেলস ইউনাইটেড (২০১০)’ চলচ্চিত্রটি।
21
আফ্রিকার কোন একটি এলাকা- তৃণভূমি। যেখানে বছরে একটি নির্দিস্ট মৌসুমে পানি আসে একটি নদী থেকে। ঐ একটি মৌসুমের পানিতেই তাদের সারা বছরের খাদ্য এবং পানির যোগান হয়। কিন্তু, এ বছর নির্দিস্ট সময় অতিবাহিত হলেও এখনো পানি আসেনি। প্রাণীরা কম বেশি পানির সংকটে ভুগছে। শুরু হয়ে গেছে ২ টি প্রাণী গ্রুপের মধ্যে পানি নিয়ে ঝগড়া- স্বল্প পরিমাণ পানির উৎস নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমেই সিংহ এবং তার বন্ধু (বেঁজি) পানির উৎসের খোঁজে বের হয়। পথের মধ্যে তাদের সাথে দেখা হয়- শ্বেত মেরু ভাল্লুক, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারু, প্রায় ৭৫০ বছর ধরে জীবিত কচ্ছপ দম্পতি, টর্কিশ চিকেন প্রভৃতি প্রাণীর সাথে। অবশেষে তারা পানির উৎসের সন্ধান পায়, কিন্তু সেটি পাথর দিয়ে আবদ্ধ। যেটিকে আমরা (মানুষ) বলি ড্যাম্প বা বাঁধ। যা করা হয়েছে একটি ইকোট্যুরিজম এর নামে। এই ইকোট্যুরিজমে আবার বসেছে ১৬৮ তম জলবায়ু সম্মেলন। এই পার্কটিতে বানর, হাঙ্গর, সহ অল্প কিছু (সংখ্যায় এবং প্রজাতিতে) বিভিন্ন প্রাণীকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যথারীতি সেখানে তারা বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় এবং সবশেষে সিংহ আটকা পড়ে। অন্যরা ফিরে যায় খালি হাতে তাদের জঙ্গলে।
সেখানে পানির সংকট এখন চরমে। অবশেষে তারা সবাই একত্রিত হয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে পানির উৎস থেকে কীভাবে পানি পাবে। আর যদি পানি না পায় তাহলে তাদের অস্তিত্ত্ব সংকটের সম্মুখীন হবে। কেউ কেউ আরো অপেক্ষা করতে চায়। কেউ মানুষ নামে এমন ভয়ঙ্কর (!) প্রাণী আছে যে পানিকে আটকে রাখতে পারে- এটি বিশ্বাসই করতে চায় না। অবশেষে তারা অধিকাংশ একমত হয় সবাই মিলে গিয়ে ড্যাম্প বা বাঁধ ভেঙে পানি নিয়ে আসবে। পরদিন তারা সবাই একত্রে যায় এবং কিছুটা নাটকীয় এবং সিনেম্যাটিক উপায়ে বাঁধ ভেঙে পানির প্রবাহ তাদের জঙ্গলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং তাদের মাঝে আবার স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। পরবর্তীতে পৃথিবীর সকল প্রাণী একত্রিত হয়ে বিভিন্ন প্রধান প্রাধান শহরে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং মানুষের কার্যক্রম অবরোধ করে জানান দেয় তোমরা (মানুষ) যদি তোমাদের কর্মকান্ডে সচেতন এবং প্রাণী ও প্রকৃতি বান্ধব না হও- তবে আমরাও পারি সেটি প্রতিরোধ করতে।
সিনেমাটি আহমরি কিছু নয়। আইএমডিবি রেটিং মাত্র ৪.৯/১০। পরিচালক রেইনহার্ড ক্লস ও হগলার টেপ। কিন্তু সিনেমাটিতে একটি বড় ধরনের দর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে।
আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের প্রকৃতি এবং প্রকৃতিক সম্পদ। কিন্তু উন্নয়নের নামে (কখনো সেটিতে ‘ইকো’ শব্দ যোগ করে) যত ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করছি সেটি প্রাণী, উদ্ভিদ, অনুজীব, মাটি, পানি, বায়ু এবং আলোর উপর কি ধরনের প্রভাব পড়ছে বা পড়তে পারে সেটি কী আমরা বিবেচনায় রাখি? এটি যদি আমরা প্রতিবেশের অন্যান্য উপাদানের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারি তাহলে সেটি যেমন এই মানুষ প্রজাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভাল ফলাফল বয়ে আনবে ঠিক তেমনি ভাল হবে প্রতিবেশের সকল উপাদানের জন্যও।
22
মানুষ বলে, তারা নাকি সৃষ্টির সেরা জীব, তাদের ক্ষমতা অসীম। তারা প্রকৃতির সকল বস্তুকে নিজের করায়ত্ত্বে করে নিজেকে সাংস্কৃতিক জীব হিসেবে রূপান্তর ঘটিয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র অনুজীব এর ক্ষমতা সম্পর্কে কী আদৌ অবগত আছে? শুধু চিন্তা করুন, যে সমস্ত ব্যকটেরিয়া আমাদের চারপাশের জৈব যৌগকে পঁচন ঘটায়। সে সমস্ত অনুজীব যদি নিজেদের কাজটুকু বন্ধ করে দেয়; কিংবা মনে করুন তারা অভিযোজন করে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে অন্য কিছুতে (পঁচানো বাদে) রুপান্তর করলো। ভাবুন একদিনেই আমাদের সভ্য পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
আমরা মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে তাদের কর্মকান্ডের কারনে বিভিন্ন পশু’র (প্রাণী) নামে কিংবা পশু হিসেবে সম্বোধন করি। কখনো ভেবেছেন কি- সেই মানুষই অন্য প্রাণীর কাছে হয়ে ওঠে- “কিছু অদ্ভুত চরিত্রের, কুৎসিত জীব, নগ্ন, লোমহীন, রক্ত পিপাসু, ভয়ঙ্কর পশু। যারা নিজেদেরকে মানুষ বলে থাকে।”
(ছবিগুলো ইন্টারনেট ওপেন সোর্স থেকে সংগৃহীত)

সহিষ্ণুতা : শৈশবেই শিখতে হবে প্রাণ ও প্রকৃতি থেকে

বর্তমান সময় এক অস্থির সময়। কিংবা সব সময়ই চলমান সময়টা হয়তো অস্থির থাকে। আমরা হয়তো সময়ের সাথে অনেক বেশি গতিশীল হয়ে যাচ্ছি। সাথে সাথে আমাদের আবেগ-অনুভুতিগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে-ধৈর্য্য, ভালোবাসা। হয়ে উঠছি অসহিষ্ণু। হত্যা, নির্যাতন, নৃসংসতা, আত্মহনন, ধর্ষণ আমাদের গতিশীল সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ। আমরা হয়ে পড়ছি সহিংস। এই সহিংসতা শুধু মানুষে মানুষে নয়। ছড়িয়ে পড়ছে-প্রাণ এবং প্রকৃতির প্রতিও। কিংবা হয়তো প্রাণ-প্রকৃতি থেকে মানুষে। যেভাবেই ছড়িয়ে পড়–ক; সেটি ক্ষতিকর মানুষ এবং প্রাণ-প্রকৃতি উভয়ের জন্যই।

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন সহিংস হচ্ছি বা সহিংস হয়ে পড়ছি? কিংবা কিভাবে আমাদের মধ্যে এই আচরণ তৈরি হচ্ছে? মনোবিজ্ঞান কিংবা আচরণ বিজ্ঞান হয়তো এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে।

এ বিষয়ে আমার নিজের একটি ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যাটা আপনি মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। কিন্তু ব্যাখ্যাটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে।
তবে এর আগে আলোচনা করা জরুরি আমরা প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি কী কী ধরনের সহিংসতা করি?
খুব ছোটবেলা থেকে আমার বদঅভ্যাস হচ্ছে গাছ দেখলেই কোন কারণ ছাড়া তার পাতা ছেড়া। আর হাতে যদি লাঠি থাকে তাহলে তো কথাই নেই! লাঠি নিয়ে আমি রাস্তার পাশের ছোট-ছোট গাছগুলোকে মেরে মেরে ন্যাড়া করে ফেলতাম। কিংবা ছোট খেঁজুর বা নারকেল গাছের পাতাকে ধরে মাঝখান দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম। আমি শৈশবে প্রায়ই লাল পিপড়া কিংবা বড় কালো পিপড়া (মাজালি) দেখলে এর মাঝখান কেটে দু’টুকরো করতাম, দেখতে চেষ্টা করতাম পিপড়াটা পিছনের অংশ দিয়ে চলতে পারছে কিনা? অথবা আমি প্রায়ই টিকটিকি’র লেজ লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে ভেঙে দিতাম। আনন্দ নিয়ে উপভোগ করতাম এবং দেখতে চাইতাম লেজটা কতক্ষণ ছটফট করে। এছাড়া লেজকাটা টিকটিকিটা কীভাবে বেঁচে থাকে তা দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করতাম। আমি বলতে গেলে প্রতিদিন শুক্রবারে দলবেঁধে গিরগিটি মেরে সওয়াব অর্জন করার চেষ্টা করতাম! ব্যাঙ ধরে ইনজেকশন দিয়ে পানি পুশ করে দেখতাম ব্যাঙটার ভেতরে কতবেশি পানি ঢুকানো যায় এবং ব্যাংকটা পানিভরা পেটে কতদিন বেঁচে থাকে তা দেখতাম।
ছোটবেলায় আমি খেলার সাথী’র সাথে তুমুল ঝগড়া করতাম! রাতের অন্ধকারে ওর লাগানো ফুল গাছগুলো কেটে ফেলে দিতাম।  আমার তখনকার বিবেচনায় পাশের বাড়ির বুড়াটা (!) বেশ কৃপণ এবং একটা খাট্টাস বলে বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করে বুড়ার গাছের নারকেল, খেঁজুর রস কিংবা মুরগি ধরে সাবাড় করতাম। যতটুকু না খাওয়া- তার চেয়ে বেশি নষ্ট করতাম।
ছোটবেলার এই ছোট-খাটো (!) ছেলোমানুষি অপরাধগুলো আমরা সবাই খুব সাধারণভাবে নিই। এই অপরাধগুলোকে অভিভাবকগণ দুষ্টমি হিসেবে বিবেচনা করে একটু বকা-ঝকা করে আমাদের ছেড়ে দিতেন। আমরাও অপরাধ করেও পাড় পেতাম। নতুন আপরাধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতাম। আমরা ধরেই নিতাম আমরা যা করেছি সেগুলো অপরাধ নয়; দুষ্টুমি মাত্র! দুষ্টুমি করতে আমাদের ভালো লাগতো। কিন্তু, এই দুষ্টুমি বা ঘটনাগুলোই আমার মতো প্রতিটি মানুষের মনে একটি গভীর রেখাপাত তৈরি করে। যেহেতু এসব ছোটখাট (!) অপরাধকে দুষ্টুমি হিসেবে ভাবতাম তাই আমরা শিখতে থাকি  ‘যে আমার চেয়ে আপাত দূর্বল; তাকে সহজেই ক্ষতি করা যায়। মেরে ফেলা যায়। কিছু না হোক বিরক্ত করা যায়।’ বিড়াল দেখলেই ফুটবলের মতো লাথি দেই, কুকুর দেখলে ঢিল ছুড়ি অকারণে- এগুলো আমরা তো নিয়মিত চর্চাই করতাম।
2-2
এভাবে আস্তে আস্তে এই সহিংসতা উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে রূপান্তরিত হয় মানুষে। তাই আমরা ধরেই নিই যে, ছোট বোনটার চুল টেনে দেয়াটা অপরাধ নয় কিংবা দূর্বল বন্ধু কিংবা ছোটদেরকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দেয়া কোন ব্যাপারই না! অন্যদের সাথে অকারণে মারামারি, ঝগড়া এগুলোও হয়ে ওঠে অনুসঙ্গ।
পরবর্তীতে বড় হওয়ার সাথে সাথে এই আচরণগুলো বড় হতে থাকে। বোনের উপর অত্যাচার রূপান্তুরিত হয় বউ কিংবা রাস্তায় হেটে যাওয়া মেয়েটার ক্ষেত্রে- নারী নির্যাতন বা অধুনা ‘ইভটিজিং’। ছোট-খাটো চুরি রূপান্তরিত হয় চাঁদাবাজি কিংবা ছিনতাই এ।
ছোটবেলার এই সহিংস আচরণ আস্তে আস্তে বড় আকারের রূপ নেয়। মানুষ থেকে শুরু করে প্রাণ ও প্রকৃতির দিকে এই সহিংস আচরণ বিস্তার লাভ করে। তাই তো পারিবারিক ঝগড়াকে কেন্দ্র করে বাগানের নতুন লাগানো গাছগুলোকে কেটে ফেলতে আমাদের কষ্ট হয় না, বিবেকে বাঁধে না। কোন প্রতিবেশীর পুকুরের মাছ নিমিষেই বিষ দিয়ে মেরে ফেলতে আমাদের বুকটা কাঁপে না।কিংবা রাতের অন্ধকারে কারও অপরিণত ধান বা কলার বাগান নষ্ট করতে একটু অসস্তিবোধ হয় না আমাদের। অন্যদিকে মিছিল-মিটিং কিংবা রাস্তা অবরোধ করতে হবে- গাছে কেটে খুব সহজেই করা যায়।
খুব আপাত সাধারণ এই ঘটনাগুলো আমাদের সামাজিক মানুষের জীবনে দারুণভাবে প্রভাব পড়ছে। আমরা সভ্য (!), সাংস্কৃতিক (!) মানুষরাই হয়ে পড়ছি সহিংস, হিংস্র। বাড়ি, রাস্তা, অফিস, বাজার- প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের অজান্তেই করছি সহিংস আচরণ।
বর্তমান এই সমস্ত সামাজিক ব্যাধি কিংবা আচরণগুলো প্রতিরোধ করতে হলে আমারে শুরু করতে হবে একেবারেই শৈশব থেকেই। পাশাপাশি, মানুষসহ সকল প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি সহনশীল, শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞ আচরণ শেখাতে হবে নতুন প্রজন্মকে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ ও অস্তিত্ব  যে কষ্ট পেতে পারে এই ‘বোধ’ জাগ্রত করতে হবে সকলের মাঝে, বিশেষ করে শিশুদের মাঝে। তবেই সম্ভব সৌহার্দ্যময়, শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং পৃথিবী গড়ে তোলা।
ছবি দু’টি  ইন্টারনেট এর উন্মুক্ত উৎস থেকে সংগৃহীত

একটি বীজ বিদ্যাপীঠ

‘নবধান্যিয়া’ শব্দের অর্থ হচ্ছে নয়টি শস্য বীজ। নব=৯ আর ধান্যিয়া= শস্যবীজ। এটি একটি জীব বৈচিত্র্য খামার (Bio-Diversity  Firm)। একই সাথে এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের-নাম ‘বীজ বিদ্যাপীঠ’ ইংরেজিতে বলা হয় ‘Earth University’। এই প্রতিষ্ঠানটির দাবি অনুযায়ী এটি একটি অর্গানিক বা জৈব কৃষি শিক্ষার আদর্শ স্থান।
প্রতিষ্ঠান এর নাম কেন নয়টি শস্য? এমন প্রশ্ন মাথায় আসা স্বাভাবিক। পরে জানলাম ‘নবধান্যিয়া’ এর শুরুর সময় প্রতিষ্ঠাতা ‘বন্দনা শিবা’ এই রামগড় গ্রামে দেশীয় বীজ সংগ্রহের জন্য বের হন। সারা দিন ঘুরে তিনি নয়টি শস্য বীজ সংগ্রহ করেন। তিনি লক্ষ্য করেন দেখেন ৯ সংখ্যাটি একটি টেকসই বা স্থায়িত্বশীল সংখ্যা। গণিতের সর্বোচ্চ অঙ্ক। তাছাড়া ৯ সংখ্যাটিকে যত বার গুন করা হোক না কেন সেখানে ৯ এর অস্তিত্ব থাকবেই। যেমনঃ ৭X৭=৪৯; এখানে যেমন ৯ আছে। তেমনি ৭X৯=৬৩; ৬+৩=৯। ‘নবধান্যিয়া’ এর লোগো হচ্ছে ইংরেজি ৯; যা আবার বীজ দিয়ে তৈরি। এখানকার অনেক কিছুই ‘নবধান্যিয়া’ লোগো এর সাথে মিল রেখে করা হয়েছে। ‘নবধান্যিয়া’ এর নামকরণ এর ঘটনা কাকতালীয় মনে হলেও তারা এই নামটাকে যৌক্তিক এবং অর্থবোধক করে তুলেছে।
Navadhanya-1
ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের রাজধানী শহর দেরাদুন থেকে ১৬ কিমি দূরে রামগড় গ্রামে ৪৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশের শুরুতেই পড়বে বিশাল আম বাগান। মনে হবে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জের কোন আম বাগানে প্রবেশ করছি। ৫ মিনিট হাটার পরে চোখে পড়বে প্রবেশ দ্বার ‘বীজ বিদ্যাপীঠে স্বাগতম’।
প্রবেশের পর প্রথেমেই একটি লেখাতে চোখ আঁটকে গেল ‘Coke Pepsi Free Zone’. পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বের হয়ে এসে স্বাগত জানালেন। এবং সহকর্মীর মাধ্যমে আমার রুম দেখিয়ে দিলেন। এটি কোন বড় বিল্ডিং নয়। ছোট ছোট একতলা ঘর। বাইরে থেকে প্লাস্টার বিহিন ইটের দেয়ালে লাল রঙ। কিন্তু ভিতরে প্রবেশের সাথে সাথে দ্বিধায় পরে গেলাম। কেননা ভেতর দেখে দেখে মনে হল মাটির দেয়াল। মাটি দিয়ে লেপা। পরে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখলাম ইটের দেয়ালের ওপরে প্লাস্টার এবং রঙ না করে মাটি দিয়ে লেপানো। কিন্তু টয়লেট একবারে সুন্দর এবং আধুনিক।
guest house
যাইহোক, ফ্রেশ এবং অন্যান্য কাগুজে কাজ শেষে বের হলাম ‘নবধান্যিয়া জীব বৈচিত্র্য খামার/বীজ বিদ্যাপীঠ’ পরিদর্শনে। ম্যানেজার জে পি কালি পরিচয় করিয়ে দিলেন চন্দ্র শেখর ভাট এর সাথে। উনি কিছু ছেলে-মেয়েদের সাথে কাজ করছিলেন একটি মাঠে। ছেলে-মেয়েদের সাথে পরিচিত হয়ে জানতে পারলাম তারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে এখানে ইন্টার্নশীপ করার জন্য। প্রথমে পরিচিত হলাম লিয়াট এর সাথে আমেরিকা থেকে ভারতে এসেছে ইন্টার্নশীপ করার জন্য। এটি তার গ্রাজুয়েশন এর একটি অংশ। তারপর শিবম; সবচেয়ে ছোট। দশম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করে-দেরাদুনেই পড়ে। ওর গরমের ছুটিতে এসেছে এখানে এক মাসের জন্য। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি ‘নবধান্যিয়া’ থেকে এমন কোন একটি জিনিস শিখেছ যেটি তোমার সারাজীবনের জন্য কাজে লাগবে?’ ও বলল, ‘এখানে আসার পূর্বে আমি খুব দুষ্ট ছিলাম। কিন্তু, এখানে আসার পর আমি কেমন জানি বদলে গেছি।” গত সপ্তাহে রবিবারের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন আমাকে সবাই দেখে বলল, আমি নাকি ভালো হয়ে গেছি। এখানে এসে আমার কৃষির প্রতি আকর্ষণ জন্মেছে। আমি পড়াশুনা শেষ করে আমার বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করবো’।
interns
এর পরে পতিতপাবন চৌধুরী ওহম; ওড়িশ্যা থেকে এসেছে। সে ওড়িশ্যার একটি কলেজ থেকে বিবিএ করছে শেষ বর্ষের ইন্টার্নশীপ এর অংশ হিসেবে বীজ বিদ্যাপীঠ এ এক মাসের জন্য এসেছে। ওর আগ্রহের জায়গা মানব সম্পদ। ওর কৃষি এবং কৃষকদের নিয়ে একটি ড্রিম প্রজেক্ট রয়েছে এবং সেটি অর্গানিক কৃষিকে কেন্দ্র করেই।
ওহম এর সাথে ওর বন্ধু ধিরাজ মিশ্রা। কলকাতার ছেলে হলেও ওড়িশ্যায় বেড়ে ওঠা। ওর আগ্রহের জায়গা অর্গানিক কৃষির মার্কেটিং নিয়ে।
এই ৪জন ইন্টার্নকে সমন্বয় করছেন মিস প্রীতি। উনি পিএইচডি করছেন। পাশাপাশি বীজ বিদ্যাপীঠ এ প্রতিবেশ গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। আমি বাংলাদেশ থেকে ৩ দিনের জন্য এই টিমের সাথে মিশে গিয়ে তাদের প্রতিদিনের কাজের সঙ্গী হলাম। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলাপ হবে।
gazibo
চন্দ্র শেখর ভাট, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী আমাকে নিয়ে পুরো খামার ঘুরিয়ে নিয়ে দেখাতে বের হলেন এবং পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন খামার অন্যান্য কর্মীদের সাথে।পুরো খামারটি ৪৫ একর। একটি বড় অংশ আম বাগান। আম বাগানের ভিতরে থাকার জন্য কুঠির; এছাড়া প্রশাসনিক কাজের জন্য কয়েকটি কুঠির এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় ডরমেটরি। সকালের মেডিটেশন, আড্ডা কিংবা অনানুষ্ঠানিক সভার জন্য রয়েছে খড়ের চালার গোলাকার ঘর। এই ঘরটির নাম গাজিবো। এটি সংস্কৃত এবং বুদ্ধ ধর্মের যৌথ সম্মিলন। শ্রদ্ধায় অবনত জ্ঞান কেন্দ্র। এখানে উন্মুক্ত জ্ঞান আহরণের সুযোগ তৈরি হয় বলে এমন নাম। গাজিবো নিয়ে মুগ্ধ হলাম যখন জানলাম- এটি তৈরি করা হয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাঙ্কের উপর। এর সাথে ডরমেটরির ছাঁদ এর সাথে সংযোগ রয়েছে। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এর চেয়ে ভালো হতো বলে আমার জানা নেই। যখন পানির সংকট থাকে তখন এই বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা হয়।  (চলবে…)

ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ

আমি গুঁটিয়ে যাওয়া কেন্নো-
কিংবা লুটিয়ে পড়া লজ্জাবতী।
তোমার আলতো ছোঁয়ায় মিইয়ে যাই-
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমার এমনই।

আলিঙ্গন

তোমার সাথে হয়ে যাক আজ আমৃত্যু আলিঙ্গন।
চুম্বককে হারিয়ে দেবে উষ্ণতম চুম্বন।
কবিতার ছন্ধ হোক শরীরের মাদকতা।
পিপাষার্তের পেয়ালা হোক আদরীয় নখরতা।
ক্লান্তি আর অবসাদ নিমিষেই যাবে মিলিয়ে
কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘতম দৃষ্টি বিনিময়ে।
আমি আজ পৃথিবীর আদিম তম প্রেমিক,
ভাবছো কী? দেখছো কী তাকিয়ে চতুর্দিক।

Cyclone Shelters should be people friendly

Satkhira is situated near Sundarban in southern coastal region of Bangladesh. The area is known for its frequent natural disaster, salinity, waterlogging, flood and cyclone. It is also known for the hard work of the people to uphold their existence coping with changed climate. However, in order to provide safe place for the people in the coastal region during the disasters the government builds some ‘shelter homes’ which are known as ‘Cyclone Centers’. These cyclone centers are used for dual purpose. During disaster these shelters are used for shelter home and when there is no disaster these centers are used for running primary daily curriculum of the existing schools in the region.
Presentation1However, when the government built the centers it did not consider separate spaces, rooms, toilets for women, children, physically disabled people and senior citizens. Besides, it also did not consider safe rooms for the livestock of those people who come here for shelter during the disasters. When climate induced disaster occurs, people do not come alone but with their livestock and movable properties. Thus due to lack of these facilities in the shelter centers, women, children, senior citizens and disabled people face immense problems. The shelter centers when used as school buildings are not friendly for running school and for the students as well. Due to lack of separate rooms and facilities people face problems living in crowding environment with male, female, children, senior citizen and physically challenge people in one room.
Women also face problem during their menstruation as they do not have the both the facilities and privacy to change and clean their napkins and pads. Even they have wash there cloth in saline water, which is risky for their personal health and hygiene. Besides, there is no extra arrangement for pregnant women as well in the center. So it creates health risk for pregnant mother or infant with mother. There is no option for dress change or dry. They use wet cloths. leading them to face health hazards.
To this end, BARCIK in association with local people arranged a dialogue and discussion with local government and govt. officer associated with cyclone center with the objective to raise the issues and problems of people in the cyclone centers. It is through this dialogue that leads the concerned authority to assure and ensure people that they will take initiative to provide women, children, senior citizen and physically challenged people friendly cyclone shelters or schools when such new cyclone center and schools are built considering the harsh situation they face.

original Bengali text by Mofijur Rahman from Satkhira 

সর‍্যি

একবার মন থেকে সর‍্যি বল,
তোমার ভুল গুলো ফুলে ভরিয়ে দেবো।
আমি হিসেবে কাচা বলে হয়তো হিসেবে তালগোল পাকিয়ে ফেলবো-
হিসাব জমা না খরচের ঘরে যাবে।
কিন্তু নিশ্চিত থেকো সেটি জমা থাকবে -
জমতে জমতে একদিন কষ্টের পাহাড় খানি
তোমাকেই উপহার দেবো।
বেদনার নীল মোড়কে জড়িয়ে।

ভালোবাসা

সব ভালোবাসা যদি ভালো ভালোবাসা হয়-
কিছু কিছু ভালবাসা তবে কেন ফেঁসে যায়?
ফেঁসে যায়, ভেসে যায়, কেঁদে কেঁদে হেসে যায়।
ভালবেসে ভালোবাসা ভাল ভাল আশা পায়,
ভালবেসে ভালবাসা কত শত ভাষা পায়।
আশা পায়, ভাষা পায়, ভাষা গুলো ছন্দতে মিশে যায়।
সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।

আমার মাঝে আগুন ছিল

নিকট অতীতে সাবাই বলতো-
আমার মাঝে নাকি আগুন আছে!
তাদের সেই মৃদু বাতাসে আমি
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতাম।
নিজে জ্বলতাম; আরো দশ জনকে জ্বালাতম,
আশপাশের ময়লা- আবর্জনাকে পুড়িয়ে দিতে
চাইতাম নিমিষেই- স্বপ্নিল পৃথিবীর প্রত্যাশায়।
আমিও বিশ্বাস করতাম যে-
আমার মাঝে নাকি আগুন আছে!
আর বর্তমানে আমি মিইয়ে যাওয়া মুড়ি!
কিংবা ন্যাতানো, প্যাচানো এক নেতা।
না কোন কামের কিংবা কামের।
আমার ভিতরে সেই আগুন
আর আমিই খুঁজেই পাই না।
ভাবি, সত্যই কি আমার মাঝে আগুন ছিল?
নাকি সবই ধোঁয়া, ধোঁয়াশার ধুম্রজাল।
আমার আগুনে কে জানি পানি ঢেলে দিয়েছে।
আমার মাঝে আর সেই আগুন নেই।
তীব্র শীতে কিংবা ঘোর বরষায়-
আগুন মা'গি ভিক্ষায়।

ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক প্রাণ ও প্রকৃতিতে!

১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রতিবছর সারা পৃথিবীর মানুষ ভালোবাসা দিবস উদযাপন করে ব্যক্তিক কিংবা সামষ্টিকভাবে। বিশেষ করে বয়োঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়ে এবং আপত তরুণদের মাঝে এই দিনটির বিশেষত্ব লক্ষ্যণীয়। এটির ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরিচয় কিংবা উদযাপনের ধরণ এবং ঢং নিয়ে রয়েছে হাজারো আলোচনা ও সমালোচনা। তবে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে-এই দিনটিতে সারা পৃথিবীতে এক ধরনের ‘পজিটিভ ভাইভ’ বিরাজ করে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এই পজিটিভ ভাইভটার খুব বেশি প্রয়োজন।
পৃথিবী তার সৃষ্টিলগ্নে ছিল উত্তপ্ত। তারপর ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে। সেই শীতল অবস্থা থেকে এই সবুজ পৃথিবীর ‘সবুজ অধিবাসী’রাই পৃথিবীকে বাসযোগ্য উষ্ণ করে তুলেছে। সবুজ অধিবাসী বলতে পৃথিবীতে বিরাজমান লক্ষাধিক প্রাণকে বোঝানো হচ্ছে। তারা তাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস অর্থাৎ জীবনধারণ এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য উষ্ণ করে তুলেছে। আজকের এই সভ্য পৃথিবীর দাবিদার যতটুকু মানুষ! ঠিক ততটুকুই কিংবা তারও অধিক দাবিদার বাদ বাকি প্রাণ। কিন্তু মানুষ নামক দাম্ভিক (!) প্রাণী নিজেকে ‘ফোকাস’ করতে গিয়ে আর সকল প্রাণকে ‘ডি-ফোকাস’ করে ফেলেছে। তাই তো পৃথিবীকে উষ্ণ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা’র জন্য প্রাকৃতিক কারণ এর সাথে শুধু মানুষ্য সৃষ্ট কারণই জড়িত। অন্য কোন প্রাণ এর জন্য দায়ি নয়। কিন্তু এই বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সমস্যা সমাধানে মানুষের প্রয়োজন পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল প্রাণীর সহযোগিতা।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বলতে শুধু প্রাকৃতিক উষ্ণতাই নয়। এর সাথে সাথে সমাজিক-সাংস্কৃতিক উষ্ণতাকেও বিবেচনা করা হচ্ছে। দিনকে দিন এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমান্তরালভাবে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, সামাজিক সহিংসতা, নির্যাতন, প্রতিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মতো হাজোরো সমস্যায় জর্জরিত বর্তমান পৃথিবী এবং মানুষ। এই সমস্যার নেতিবাচক প্রভাব শুধু মানুষ একা ভোগ করছে না; অন্য প্রাণও সংকটের সম্মূখীন। কিন্তু একমাত্র মানুষই পারে এই সমস্যা থেকে উত্তোরণ করাতে। অন্য প্রাণ হতে পারে সহযোগী, সহযাত্রী; কিন্তু নেতৃত্ব মানুষকেই দিতে হবে।
ভালোবাসা দিবসে যে ‘পজিটিভ ভাইভ’ বিরাজ করে সেই পজিটিভ ভাইভটা হতে পারে এই বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক ধাপ। কিন্তু সেটি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আরো নির্দিষ্ট করে বললে শুধুই আমাদের ভালোবাসার মানুষ কিংবা সবচেয়ে নিকটজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেটি কী এই স্বল্প গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আসুন এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসি।
এই ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা বিলিয়ে দেই আমাদের সবচেয়ে দূরত্বের সম্পর্কের মানুষের জন্য। যে ব্যক্তিটির সাথে আমাদের সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক; আসুন এই ভালোবাসা দিবসে তাকেই ভালোবাসি। তাকে একটি ফোন দিয়ে জানাই ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। ভালোবাসা দিবসে আমরা ফুল ও চকলেট উপহার দিতে ভালোবাসি। সেই ‘শত্রু’কেই দিই ফুল আর চকলেট। দেখবো আমাদের জীবনটা আরো বেশি ভালোবাসায় ভরে উঠবে।
ভালোবাসা দিবসে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে চাই। চলুন না বিলিয়ে দিই যার সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা প্রয়োজন সেই মানুষটাকেই। হয়তো আপনার আমার পরিচিত কেউ মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত; তাকেই জানাই আমাদের ভালোবাসা। কিংবা আমাদের আশেপাশের হাজারো ভালোবাসা (!) বঞ্চিত মানুষ আছে- আসুন তাদেরকেই ভালোবাসি। ভালোবেসে ব্যবস্থা করি একবেলার খাবার- ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের পরিবর্তে। কিংবা প্রয়োজনীয় সেবা। আসুন ভালোবাসা দিবসে ছুটি নিয়ে-ভালোবাসার মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে সময় কাটাই কিছু ভালোবাসা বঞ্চিত নারী, শিশু এবং প্রবীণ নাগরিকের সাথে। ভালোবাসা দিবসে আসুন রক্ত দেই। কিংবা ব্যস্ত দিনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে একটি অন্তত ভালো কাজ করি।

ভালোবাসা কি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আমরা কী শুধু মানুষ নিয়েই বেঁচে থাকি? মানুষ ছাড়াও আমাদের চারপাশে হাজারো বস্তুগত এবং অবস্তুগত উপাদান রয়েছে। সেই সমস্ত উপাদানগুলোকে কি ভালোবাসা যায় না? আমরা যে বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে আছি-সেই বায়ুকে চলুন ভালোবাসি। দূষিত বায়ুকে কম দূষিত করি (কম কার্বণ নিঃসরণ করা) কিংবা বিশুদ্ধ করার (গাছ লাগানো) উদ্যোগ নিয়ে বায়ুকে ভালোবাসি। আসুন মাটিকে ভালোবাসি; কম রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার কিংবা মাটি দূষণ কম করে।
ভালোবাসার অন্য এক প্রতিশব্দ হয়তো ফুল। আমরা প্রতিবার ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষটিকে ফুল উপহার দিই-খুবই ভালো কথা। এবার ফুলটিকেই ভালোবেসে একটি ফুলগাছ লাগাই। যেন আগামী ভালোবাসা দিবসে ফুল কেনা না লাগে। কিংবা ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষটিকেই হয়তো একটি ফুলগাছই উপহার দিলাম।
ভালোবাসা দিবসে অনেকেই মানবতার জন্য রক্তদান ক্যাম্প, চিকিৎসা ক্যাম্প, অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করি। নিঃসন্দেহে খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর জন্য স্বাস্থ্য ক্যাম্প কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় অর্থ সংগ্রহ করতে কী পারি না-এই ভালোবাসা দিবসটিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে। আসুন ভালোবাসা দিবসে কিছু না পারি প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের অন্তত ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকি।
কেন ভালোবাসার এই গন্ডি ভাঙা জরুরি? কারণ মানুষ একা বাঁচতে পারে না। আর তাই মানুষের প্রয়োজনেই মানুষের পাশাপাশি অন্য প্রাণ এবং প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিক্ষা দিক এই সার্বজনীন ভালোবাসা দিবস। এই দিনের ‘পজিটিভ ভাইভ’ একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে আরো বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারলেই এই দিনটির প্রকৃত তাৎপর্য ফুটে উঠবে। পাশপাশি, শুধু মানুষে-মানুষে সীমাবদ্ধ থাকলে এক সময় মানুষ ছাড়া আমাদের চারপাশে আর কিছুই থাকবে না। আবার শুধু ভালোবাসার মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের শত্রু সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। তাই ভালোবাসাতে হবে সবাইকে। আমাদের শত্রুকে; ভালোবাসা বঞ্চিত মানুষটিকেই। ভালোবাসতে হবে আমাদের চারপাশের প্রাণ, প্রকৃতি এবং প্রতিবেশকে। তবেই সম্ভব একটি ভালোবাসাময় পৃথিবীর। যেটি হবে আরো বেশি উপযোগী, স্বাচ্ছন্দ্য এবং  টেকসই সকল প্রাণের জন্য।

দ্বন্দ্ব ও উন্নয়ন (Conflict and Development)

উন্নয়নকর্মী হিসেবে একটা জিনিস বারবার ভাবিয়েছে। আমরা বারবার ‘না ঘর কা না ঘটকা’ অবস্থানে থাকি। এড়িয়ে চলি সকল ধরনের ঝামেলা  বা দ্বন্দ্ব। কিন্তু দ্বন্দ্ব ছাড়া যেখানে আমাদের জীবনের কোন কাজই সম্ভব নয়। সেখানে সমাজ পরিবর্তন বা উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব। খাদ্য গ্রহণ থেকে ত্যাগ, চলাফেরা, বিনোদন সব কিছুর সাথে দ্বন্দ্ব বা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিদ্যমান। সুতরাং উন্নয়ন বা সমাজ এর ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য যদি সমাজে বা প্রকৃতিতে বিদ্যমান অপরিহার্য দ্বান্দ্বিক সম্পর্ককে এড়িয়ে বা পাশ কাটিয়ে কী আদৌও সম্ভব!

দ্বন্দ এবং উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করার আগে দ্বন্দ্ব কে নিয়ে একটু নাড়াচড়া করা জরুরি। প্রথমেই জেনে নেই দ্বন্দ্ব এর সংজ্ঞা এবং ধরণ সমূহ।
Conflict শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয় ‘দ্বন্দ্ব’ শব্দটি। দ্বন্দ্ব বলতে বুঝায় সংঘাত, ঝগড়া, বিবাদ, যুদ্ধ বা শত্রুতা; দ্বিধা বা সংশয়। দ্বন্দ্ব হলো বৈপরীত্য বা Contradiction। দ্বন্দ্ব একটি সমাজ এবং সংস্কৃতিতে গতিশীলতা দান করে। সবকিছু নিয়ত গতিশীল, তা সে অণু-পরমাণুই হোক কিংবা গ্রহ-নক্ষত্র। আমরা আমাদের সীমিত খালি চোখে তা সবসময় অনুধাবন করি না। এবং এই গতিশীলতার মধ্যে বৈপরীত্য কাজ করে। আর এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই সবকিছুর বিকাশ হয়। সে জন্যই কোন কিছু বিকাশের কিংবা পরিবর্তনের পথ কখনো মসৃণ হয় না। ধীরে ধীরে জড়ো হওয়া ছোট ছোট পরিবর্তন হঠাৎ করে বড় পরিবর্তনের সূচনা করে।
দ্বন্দ্ব বলতে বোঝায় একটি দলের এক বা একাধিক সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য, বিরোধ, সংঘর্ষ প্রভৃতি বিশ্বাস বা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে দ্বন্দ্ব দু’টি দলের মধ্যেও হতে পারে। দ্বন্দ্ব যখন একই দলের মধ্যে সংঘঠিত হয় তখন তাকে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বলে। আর যদি দ্ইু বা ততোধিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয় তখন সেটিকে আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্ব বলা হয়। দ্বন্দ্বকে দেখা হয় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। অর্থাৎ দ্বন্দ্ব কোন স্থায়ী ও অনড় নয়। যদি দ্বন্দ্ব সমঝোতায় আসে তাহলে দলের সদস্যরা পুনরায় আগের কাজগুলো করতে থাকে। সমঝোতা না হলে নতুন একটি বিষয় বা ঘটনার সূচনা হয়।
মানুষ এবং দ্বন্দ্ব (সামাজিক দ্বন্দ্ব)
মানুষের সৃষ্টি থেকেই দ্বন্দ্বের শুরু। কখনো সে নিজের সাথে। কখনো বা অন্যের সাথে। আমাদের চারপাশের প্রতিদিনকার ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলে আমরা দ্বন্দ্বের নানারূপ দেখতে পাই। কিছু সাধারণ দ্বন্দে¦র রূপ হচ্ছে-গোত্র-গোত্র দ্বন্দ্ব, জাতিগোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, নারী-পুরুষ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মতাদৈর্শ্বিক দ্বন্দ্ব  (বামপন্থী বনাম ডানপন্থী), মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব (গার্মেন্টস কর্মী এবং মালিক)। কখনো কখনো এই দ্বন্দ্বের কারণ হয় বস্তুগত উপাদান নিয়ে। যেমন: প্রাকৃতিক সম্পদ ভূমি নিয়ে চরাঞ্চলগুলো প্রায়ই দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। আবার সাংস্কৃতিক উপাদান নিয়েও দ্বন্দ্বের সংখ্যা কম নয়। উদাহরণ হিসেবে ভাষা নিয়ে দ্বন্দ্ব, সম্মান-প্রতিপত্তি নিয়ে, ধর্ম নিয়ে, প্রভৃতি।
দ্বন্দ্বের বৈচিত্রতা 
দ্বন্দ্বকে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। ধারণা করা হয়, শুধুমাত্র মানুষে মানুষেই দ্বন্দ্ব হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতির প্রায় অধিকাংশ বিষয়ের সাথে দ্বন্দ্ব অপরিহার্য একটি বিষয়। মানুষে মানুষে যেমন দ্বন্দ্ব থাকে তেমনি দ্বন্দ্ব হয় মানুষ এবং প্রকৃতির সাথে। আবার প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের সাথে দ্বন্দ্বের প্রকৃতি এবং পদ্ধতি এক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষ এবং প্রাণীর মধ্যে যে ধরনের দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল, মানুষ এবং উদ্ভিদের সাথে ভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল। আবার ভৌত উপাদান মাটি, পানি, বায়ুর সাথে ভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আমরা যদি বায়ুকে দূষিত করে ফেলি আমাদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাহলে একসময় ওই বায়ু আর আমাদের জীবন প্রদায়ী না হয়ে হুমকির কারণ হয়ে যায়। তখন আমরাই আবার নানাভাবে সেই বায়ুকে নিজেদের জীবন উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করি।



মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জৈবিক এবং ভৌত পরিবেশের একটি উপাদানের সাথে অন্যটির নানা ধরনের দ্বন্দ্ব বিরাজ করে। আবার একটি প্রাণীর সাথে উদ্ভিদের যে দ্বন্দ্ব, সেটি উদ্ভিদে-উদ্ভিদে বা প্রাণীতে-প্রাণীতে ভিন্ন হয়। আবার একই উদ্ভিদ বা প্রাণীর মধ্যে প্রজাতি ভেদেও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান থকতে পারে। সবশেষে পরিবেশের ভৌত বা জৈবিক উপাদানের সাথে জড় উপাদানের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল। আবার জড় বস্তুর মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল থাকতে পারে। যেমন: প্রযুক্তি হিসেবে লাঙল এর ব্যবহার কমে যায় যখন কৃষি ক্ষেত্রে পাওয়ার ট্রিলার এর আর্বিভাব হয়। অন্যদিকে জড় বস্তুর ব্যবহারের সাপেক্ষে পরিবেশের জৈবিক উপাদানের সাথে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক তৈরি হয়। পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে ভূমি কর্ষণের ফলে মাটিস্থ কেঁচোসহ অন্যান্য উপকারী কীট-পতঙ্গ নষ্ট হচ্ছে। আবার কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বায়ু দূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দ্বন্দ্ব এবং উন্নয়ন
দ্বন্দ্বকে যদি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। আর উন্নয়ন যদি আর্থ-সামাজিক নির্দেশকের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়। তাহলে দ্বন্দ্ব উন্নয়নেরই একটি অংশ। আবার কোন একটি জনগোষ্ঠীর দ্বন্দ্বগুলো না বুঝতে পারলে সেই জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। আর এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিবেচনা না করাই বুঝি কাংখিত উন্নয়নের পথে আমাদের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। ধরা যাক, কোন একটি প্রান্তিক এবং সুবিধা বঞ্চিত(!) একটি জনগোষ্ঠীর জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলো। কিন্তু, এখানে ওই জনগোষ্ঠীর সাথে আর যে সমস্ত জনগোষ্ঠীর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক রয়েছে তারা উন্নয়ন পরিকল্পনার বাইরে থাকে। তাহলে প্রকল্পের কার্যক্রমগুলো কী আদৌও কার্যকর হবে?
অন্যদিকে উন্নয়নে যদি মানুষ-মানুষ ছাড়া প্রকৃতির অন্যান্য দ্বন্দ্ব গুলোকে বিবেচনা না করা হয়; তাহলে সেটি টেকসই উন্নয়ন হবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে বরেন্দ্র এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করার জন্য ধান চাষভিত্তিক প্রযুক্তির অবতারণা এই প্রতিবেশীয় ধান এবং অন্যান্য প্রজাতি কিংবা পানি এবং মাটির যে সম্পর্ক সেটি ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছে। কিংবা ধান চাষ বৃদ্ধির ফলে ঐ এলাকার অচাষকৃত খাদ্য হিসেবে বিবেচিত উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে-সেটিও বিবেচনা করা জরুরি। যদি এই বিষয়গুলো বিবেচনা না করা হয় তবে সেটি তাৎক্ষণিক সুফল বয়ে আনলেও দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

উদাহরণ হিসেবে জেন্ডার উন্নয়ন বলতে এখনো পর্যন্ত প্রধানতম ধারণা হচ্ছে জেন্ডার মানেই নারী। যার সকল কিছুতে নারী সম্পৃক্ত থাকবে। অনেকটা এভাবে বলা যায়, নারীদের জন্য নারীদের দ্বারা পরিচালিত এবং বাস্তবায়িত উন্নয়ন কার্যক্রম। এখানে শুধু পুরুষরা বাইরে থাকে তাই নয়; অনেকাংশে পুরুষকে জেন্ডার সমতার পরিপন্থি বা অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, অন্যান্য বিষয়ের  মতো নারী পুরুষের সম্পর্ক চিরকালই দ্বন্দ্বিক। তাই জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ এর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিবেচনা করাটা আত্যাবশ্যকীয়।
পরিবেশ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ ধ্বংসের জন্য যে সমস্ত স্টেকহোল্ডার দায়ী তাদেরকে অনেকটা ভিলেন হিসেবে বিবেচনা করে  প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়। যেমন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কখনোই কলকারখানার মালিক কিংবা এর সাথে জড়িত মানুষদের নিয়ে সেনসিটাইজেশন করার কোন উদ্যোগ আজও নজরে আসেনি। কিংবা শিশুশ্রম বা গৃহস্থলীতে শিশু নির্যাতন নিয়ে কাজ করার সময় যদি যে বাড়িতে শিশু কাজ করে তাদেরকে যদি বিবেচনায় না আনি তাহলে কাংখিত উন্নয়ন বা পরিবর্তন যাই বলি না কোন কোনটাই অর্জিত হবে কী?
পরিশেষে বলতে চাই, উন্নয়নকর্মী বা সমাজকর্মী যাই হই না কেন- আমাদের সমাজে এবং প্রকৃতিতে বিদ্যমান দ্বন্দ্বসমূহকে বুঝতে হবে এবং সেটিকে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। আর আমরা যখন দ্বন্দ্বকে স্বাভাবিক এবং সার্বজনীন হিসেবে বিবেচনা করতে পারবো তখনই সমাজকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবো।

নোট: ছবিগুলো ইন্টানেট এর মুক্ত সোর্স থেকে সংগৃহীত।