Search This Blog

মন নায়রের মাঝি

মনের মাঝে বসত করে মন নায়রের মাঝি
ইচ্ছে মতোন ঘুরে বেড়ায়- ভীষণ রকম পাঁজি।

কাজ নাই তার অকাজ যে সব-
আমি অচেতনঘুমে; সে কলরবে।
তার ভীষণ উচাটন মন- আমি ঘরকুনো।
শান্তশিষ্ট বাইরের সব- ভিতরটা বেশ বুনো।

মাকে ভালোবাসি

আজ মা দিবস! পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ইংরেজি বছরের মে মাসের ২য় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ বছর মে মাসের ২য় রবিবার ১৪ তারিখ হওয়ায় আজ ‘মা দিবস’। মা দিবস পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশে পালিত হলেও সবদেশে কিন্তু একই দিনে পালিত হয় না। বছরের প্রায় ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হয় মা দিবস। অনেক দেশে বিশেষ করে পূর্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে নারী দিবসেই একসাথে ‘মা দিবস’ পালন করা হয়। সবাই যে আবার ইংরেজি ক্যাল্ডোর অনুসরণ করে তাও কিন্তু নয়। নেপাল যেমন বৈশাখ মাসের অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে মা দিবস পালন করে; তেমনি ইরান ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে ২০ জমাদিউস সানিতে আর ইসরাইল ২২ মে মা দিবস পালন করে থাকে। মা দিবস ঘিরে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বলা হয়ে থাকে এই দিবস উদযাপন নাকি পুঁজিবাদ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ফসল। কিন্তু মা দিবস বিংশ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হলেও এর শিকড় প্রত্থিত রয়েছে সূদূর অতীতে। প্রাচীন গ্রিক, রোমান ও খ্রিস্টান সভ্যতায় মাতৃত্বকে ঘিরে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

আধুনিক মা দিবস পালনের পথিকৃত ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসকে। তিনি তার মায়ের সম্মান এবং কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ১৯০৮ সালে মা দিবস পালন করেন এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য জোর আন্দোলন চালান। তবে তার আন্দোলন একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করে; অন্যদিকে এই দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন কার্ড, চকলেট, বেকারি, গিফটসহ নানা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ের প্রসার ঘটাতে থাকে। আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস মা দিবসের এই ধরনের বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করে আন্দোলন চালান এবং গ্রেপ্তারও হন।
মা দিবস উদযাপন করা হয় মা, মাতৃত্ব, মাতৃত্বের বন্ধন এবং সমাজে মায়ের ভূমিকাকে স্বীকৃতি এবং সম্মান জানানোর জন্য। মা হওয়া কিংবা সন্তান জন্মদান এবং লালন-পালন স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক বিষয় হলেও সমাজ এবং সংস্কৃতির নির্মাণ, বিকাশ এবং টিকিয়ে রাখতে ‘মা’ এর ভূমিকাই অগ্রগণ্য। নতুন প্রজন্ম গর্ভে ধারণ, জন্মদান, বুকের দুধ খাওয়ানো, শিক্ষা দান, সামাজিকীকরণসহ অসংখ্য কাজ করে থাকেন একজন মা। একটি সমাজ, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার বিকাশে তাই একেবারে পিছন থেকে প্রাথমিক এবং মূখ্য কাজগুলো সম্পাদন করে থাকেন একজন মা। তাই এটি মানব সমাজ এবং সভ্যতারই দায় এবং দায়িত্ব সেই ‘মা’ কে আলাদাভাবে বিশেষ সম্মান জানানো। পাশাপাশি, সমাজের যে সমস্ত সদস্য ‘মা’ কে অবহেলা, বঞ্চনা এবং নিপিড়ীন করে থাকেন তাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো মায়ের অবদান, ত্যাগ, ভালোবাসা, মমতাকে।  আর এটি করতে গিয়ে বছরের ৩৬৫ দিনের একটি দিন মায়ের নামে উৎসর্গ করলেও বা ক্ষতি কী!
তাই আসুন মাকে ভালোবাসি। অনেক ব্যস্ততার মাঝে ‘মা’ এর জন্য প্রতিদিন একটু সময় বের করি। ‘মা’র খোঁজ নিই। তার পাশে বসি। মা কিন্তু আমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চান না, আদর চান না, কোন সেবা কিংবা কোন আবদারও হয়তো নেই। শুধু একটাই প্রত্যাশা- ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’
প্রাণ ও প্রকৃতির সবচেয়ে চিরন্তন, সংবেদনশীল এবং টেকসই কাজ হচ্ছে জন্মদান বা মাতৃত্ব। আর এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নারী। তাকে আমরা ‘মা’ হিসেবে সম্বোধন করে থাকি বা চিনে থাকি। সবচে’ মজার এবং আগ্রহোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে ‘মা’ এর অস্তিত্ব সকল প্রাণ এবং প্রকৃতিতে বিরাজমান। অনেক উদ্ভিদ এবং প্রাণ সমাজে বাবাকে চিহ্নিত করা সম্ভব না হলেও মা কে  চিহ্নিত করা সম্ভব। তাই তো প্রাণ এবং প্রকৃতির এক চিরন্তন সত্ত্বা হচ্ছে ‘মা’।
‘মা’ মানে মাটি। ‘মা’ মানে প্রাণ। ‘মা’ মানে প্রকৃতি; ‘মা’ মানে আমাদের এই পৃথিবী। আর এই পৃথিবী ‘মা’ এর সর্বশ্রেষ্ঠ (মানুষের দাবি অনুসারে) সন্তান যেহেতু মানুষ; তাই মানুষের দায় তার নিজের মানব ‘মা’ কে ভালোবাসা, সম্মান আর স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি মাটি ‘মা’কে, প্রাণ-প্রকৃতি ‘মা’কে সর্বোপরি এই পৃথিবী ‘মা’কেও ভালোবাসা, সম্মান আর স্বীকৃতি জানানোর। কারণ আমাদেরই ‘মা’ই যে আর সব ‘মা’ (মাটি, প্রাণ-প্রকৃতি, পৃথিবী) এর প্রতিরূপ। শুধু আমাদের মানব ‘মা’কে ভালো রাখলে কিন্তু হবে না। আমাদের মাটিকে ভালো রাখতে হবে, সকল প্রাণ এবং প্রকৃতিকে ভালো রাখতে হবে। এই পৃথিবীকেও সবুজ, শ্যামলে ভরে রাখতে হবে। তবেই আমাদের ‘মা’ও ভালো থাকবে। ‘মা’ যে মাটিতে হাঁটবেন, যে উদ্ভিদ এবং প্রাণী খেয়ে বাঁচবেন, যে পৃথিবীতে বুক ভরে নিশ্বাস নেবেন- সেগুলো যদি দূষিত, ধ্বংস আর বিষাক্ত হয়ে যায়; তাহলে ‘মা’ কি সুস্থ, সুন্দর আর দীর্ঘজীবী হয়ে আমাদের পাশে থাকবেন? কক্ষনোই নয়।

ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক প্রাণ ও প্রকৃতিতে!


১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রতিবছর সারা পৃথিবীর মানুষ ভালোবাসা দিবস উদযাপন করে ব্যক্তিক কিংবা সামষ্টিকভাবে। বিশেষ করে বয়োঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়ে এবং আপত তরুণদের মাঝে এই দিনটির বিশেষত্ব লক্ষ্যণীয়। এটির ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরিচয় কিংবা উদযাপনের ধরণ এবং ঢং নিয়ে রয়েছে হাজারো আলোচনা ও সমালোচনা। তবে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে-এই দিনটিতে সারা পৃথিবীতে এক ধরনের ‘পজিটিভ ভাইভ’ বিরাজ করে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এই পজিটিভ ভাইভটার খুব বেশি প্রয়োজন।
পৃথিবী তার সৃষ্টিলগ্নে ছিল উত্তপ্ত। তারপর ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে। সেই শীতল অবস্থা থেকে এই সবুজ পৃথিবীর ‘সবুজ অধিবাসী’রাই পৃথিবীকে বাসযোগ্য উষ্ণ করে তুলেছে। সবুজ অধিবাসী বলতে পৃথিবীতে বিরাজমান লক্ষাধিক প্রাণকে বোঝানো হচ্ছে। তারা তাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস অর্থাৎ জীবনধারণ এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য উষ্ণ করে তুলেছে। আজকের এই সভ্য পৃথিবীর দাবিদার যতটুকু মানুষ! ঠিক ততটুকুই কিংবা তারও অধিক দাবিদার বাদ বাকি প্রাণ। কিন্তু মানুষ নামক দাম্ভিক (!) প্রাণী নিজেকে ‘ফোকাস’ করতে গিয়ে আর সকল প্রাণকে ‘ডি-ফোকাস’ করে ফেলেছে। তাই তো পৃথিবীকে উষ্ণ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা’র জন্য প্রাকৃতিক কারণ এর সাথে শুধু মানুষ্য সৃষ্ট কারণই জড়িত। অন্য কোন প্রাণ এর জন্য দায়ি নয়। কিন্তু এই বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সমস্যা সমাধানে মানুষের প্রয়োজন পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল প্রাণীর সহযোগিতা।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বলতে শুধু প্রাকৃতিক উষ্ণতাই নয়। এর সাথে সাথে সমাজিক-সাংস্কৃতিক উষ্ণতাকেও বিবেচনা করা হচ্ছে। দিনকে দিন এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমান্তরালভাবে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, সামাজিক সহিংসতা, নির্যাতন, প্রতিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মতো হাজোরো সমস্যায় জর্জরিত বর্তমান পৃথিবী এবং মানুষ। এই সমস্যার নেতিবাচক প্রভাব শুধু মানুষ একা ভোগ করছে না; অন্য প্রাণও সংকটের সম্মূখীন। কিন্তু একমাত্র মানুষই পারে এই সমস্যা থেকে উত্তোরণ করাতে। অন্য প্রাণ হতে পারে সহযোগী, সহযাত্রী; কিন্তু নেতৃত্ব মানুষকেই দিতে হবে।
ভালোবাসা দিবসে যে ‘পজিটিভ ভাইভ’ বিরাজ করে সেই পজিটিভ ভাইভটা হতে পারে এই বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক ধাপ। কিন্তু সেটি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আরো নির্দিষ্ট করে বললে শুধুই আমাদের ভালোবাসার মানুষ কিংবা সবচেয়ে নিকটজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেটি কী এই স্বল্প গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আসুন এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসি।
এই ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা বিলিয়ে দেই আমাদের সবচেয়ে দূরত্বের সম্পর্কের মানুষের জন্য। যে ব্যক্তিটির সাথে আমাদের সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক; আসুন এই ভালোবাসা দিবসে তাকেই ভালোবাসি। তাকে একটি ফোন দিয়ে জানাই ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। ভালোবাসা দিবসে আমরা ফুল ও চকলেট উপহার দিতে ভালোবাসি। সেই ‘শত্রু’কেই দিই ফুল আর চকলেট। দেখবো আমাদের জীবনটা আরো বেশি ভালোবাসায় ভরে উঠবে।
ভালোবাসা দিবসে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে চাই। চলুন না বিলিয়ে দিই যার সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা প্রয়োজন সেই মানুষটাকেই। হয়তো আপনার আমার পরিচিত কেউ মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত; তাকেই জানাই আমাদের ভালোবাসা। কিংবা আমাদের আশেপাশের হাজারো ভালোবাসা (!) বঞ্চিত মানুষ আছে- আসুন তাদেরকেই ভালোবাসি। ভালোবেসে ব্যবস্থা করি একবেলার খাবার- ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের পরিবর্তে। কিংবা প্রয়োজনীয় সেবা। আসুন ভালোবাসা দিবসে ছুটি নিয়ে-ভালোবাসার মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে সময় কাটাই কিছু ভালোবাসা বঞ্চিত নারী, শিশু এবং প্রবীণ নাগরিকের সাথে। ভালোবাসা দিবসে আসুন রক্ত দেই। কিংবা ব্যস্ত দিনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে একটি অন্তত ভালো কাজ করি।

ভালোবাসা কি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আমরা কী শুধু মানুষ নিয়েই বেঁচে থাকি? মানুষ ছাড়াও আমাদের চারপাশে হাজারো বস্তুগত এবং অবস্তুগত উপাদান রয়েছে। সেই সমস্ত উপাদানগুলোকে কি ভালোবাসা যায় না? আমরা যে বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে আছি-সেই বায়ুকে চলুন ভালোবাসি। দূষিত বায়ুকে কম দূষিত করি (কম কার্বণ নিঃসরণ করা) কিংবা বিশুদ্ধ করার (গাছ লাগানো) উদ্যোগ নিয়ে বায়ুকে ভালোবাসি। আসুন মাটিকে ভালোবাসি; কম রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার কিংবা মাটি দূষণ কম করে।
ভালোবাসার অন্য এক প্রতিশব্দ হয়তো ফুল। আমরা প্রতিবার ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষটিকে ফুল উপহার দিই-খুবই ভালো কথা। এবার ফুলটিকেই ভালোবেসে একটি ফুলগাছ লাগাই। যেন আগামী ভালোবাসা দিবসে ফুল কেনা না লাগে। কিংবা ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষটিকেই হয়তো একটি ফুলগাছই উপহার দিলাম।
ভালোবাসা দিবসে অনেকেই মানবতার জন্য রক্তদান ক্যাম্প, চিকিৎসা ক্যাম্প, অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করি। নিঃসন্দেহে খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর জন্য স্বাস্থ্য ক্যাম্প কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় অর্থ সংগ্রহ করতে কী পারি না-এই ভালোবাসা দিবসটিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে। আসুন ভালোবাসা দিবসে কিছু না পারি প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের অন্তত ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকি।
কেন ভালোবাসার এই গন্ডি ভাঙা জরুরি? কারণ মানুষ একা বাঁচতে পারে না। আর তাই মানুষের প্রয়োজনেই মানুষের পাশাপাশি অন্য প্রাণ এবং প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিক্ষা দিক এই সার্বজনীন ভালোবাসা দিবস। এই দিনের ‘পজিটিভ ভাইভ’ একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে আরো বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারলেই এই দিনটির প্রকৃত তাৎপর্য ফুটে উঠবে। পাশপাশি, শুধু মানুষে-মানুষে সীমাবদ্ধ থাকলে এক সময় মানুষ ছাড়া আমাদের চারপাশে আর কিছুই থাকবে না। আবার শুধু ভালোবাসার মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের শত্রু সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। তাই ভালোবাসাতে হবে সবাইকে। আমাদের শত্রুকে; ভালোবাসা বঞ্চিত মানুষটিকেই। ভালোবাসতে হবে আমাদের চারপাশের প্রাণ, প্রকৃতি এবং প্রতিবেশকে। তবেই সম্ভব একটি ভালোবাসাময় পৃথিবীর। যেটি হবে আরো বেশি উপযোগী, স্বাচ্ছন্দ্য এবং  টেকসই সকল প্রাণের জন্য।
    ** ছবিগুলো সংগৃহীত

আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার

‘পরিবেশ দিবস’ কথাটা মাথায় আসলে মনে হয় গাছ লাগাই। পরিবেশ দিবস পালিত হয় প্রতিবছর ৫ জুন। আর জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় বাংলাদেশের বর্ষা ঋতু। যা গাছ লাগানোর জন্য একবারেই উপযোগি। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দেখে আসছি পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গাছ লাগানো কার্যক্রম। একসময় পরিবশে দিবস উপলক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের মাঝে বন বিভাগ থেকে বিনামূল্যে গাছ বিতরণ কর্যক্রম চালু ছিল। তাই এখনো মাথার ভিতর পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গাছ লাগানোর বিষয়টিই সবার আগে মাথায় আসে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পরিবেশের সমার্থক শব্দ কি তাহলে গাছ? পরিবেশের অন্যতম উপাদান কি তাহলে গাছ? নাকি পরিবেশ রক্ষা করতে শুধু গাছই যথেষ্ট?
পরিবেশ দিবসের সংজ্ঞাটা একটু দেখে নেওয়া যাক। বাল্য বয়স থেকে শিখে এসেছি ‘আমাদের চারপাশে যা আছে তাই নিয়ে আমাদের পরিবশে।’ আমাদের চারপাশে কি শুধু গাছ থাকে; কখনোই নয়! আমাদের চারপাশে গাছ ছাড়াও রয়েছে নানান প্রাকৃতিক উপাদান। উদ্ভিদ, প্রাণী, মাটি, বায়ু, নদীনালা, খালবিল, পাহাড়, অরণ্যসহ অসংখ্য উপাদান। তবে এটা ঠিক যে, আমাদের চারপাশে প্রকৃতির অসংখ্য উপাদানের মধ্যে গাছ একটি। গাছের সাথেই আমরা বেশি পরিচিত হই। এটাও ঠিক যে, গাছই আমাদেরকে বাঁচায়। কারণ গাছ যদি অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে মানুষসহ অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য প্রাণী নির্ঘাত মারা যেতো। তাই গাছ লাগানো অবশ্যই একটা ভালো উপায় হতে পারে পরিবেশকে ভালো এবং সুস্থ রাখার জন্য। তবে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ তখন ভালো ও সুস্থ থাকবে যখন গাছের পাশাপাশি আমাদের চারপাশের অবস্থানকারী গাছসহ ঘাস, গুল্ম, মাটি, বায়ু, নদীনালা, খালবিল, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রাণী প্রতি যত্নবান ও দায়িত্বশীল হই। দায়িত্বশীল ও যত্নবান হলে আমরা এগুলো ধ্বংস করবো না, কেউ যাতে এগুলো ধ্বংস না করতে পারে তার জন্য আমরা সোচ্চার হবো।

পরিবেশকে শুদ্ধ, নির্মল ও সুস্থ রাখার জন্য শুধু গাছ লাগালে চলবে না; তা কিন্তু যথেষ্টও নয়। গাছ ছাড়াও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানকে ভালো রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৃতিতে একটি ঘাস, একটি গুল্ম, একটি ছোট প্রাণী, একটি বহৎ প্রাণীকে ভালো রাখার উদ্যোগ নিতে হয় মানুষকে। শুধু তাই নয়। এ গাছ, ঘাস, গুল্ম যাতে সবল ও সতেজ হয় এজন্য মাটিকেও যত্ন রাখতে হয়। যত্ন রাখতে হয় নদী, নালা, খাল বিলকেও। কারণ প্রাকৃতিক উপাদান প্রতিটিরই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। একটি প্রাকৃতিক উপাদান বিলুপ্ত হলে এর প্রভাব অন্য উপাদানের ওপরও পড়ে। এজন্য পরিবেশকে সুন্দর, ভালো, নির্মল ও বিশুদ্ধ করার জন্য পরিবেশ তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানকেই আমাদের চিনতে হবে, জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। গাছের মতো করে অন্যান্য উপাদানকেও যত্ন করতে হবে, তাদেরকে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সেগুলোর বিস্তার ও বিকাশ করতে হবে। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে জানার, বুঝার ও উপলদ্ধি করার এবারের পরিবেশ দিবস ২০১৭ এর প্রতিপাদ্য যথার্থ। কেননা এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি প্রকৃতির কাছকাছি কিংবা প্রকৃতির সাথে মানুষকে বসবাস করতে উৎসাহিত করছে। “Connect with Nature”এই প্রতিপাদ্যটি, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার “আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার” শিরোনামে উদযাপন করছে, সেটি আমাদেরকে প্রকৃতিকে তার মতো করে উপলদ্ধি করার অবকাশ দিয়েছে।
প্রকৃতিকে সৃষ্টিকর্তা বৈচিত্র্যময়তায় পরিপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। এই বৈচিত্র্য বিনষ্ট হলে, লুপ্ত হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। ‘আমাদের’ বলতে শুধুমাত্র মানুষকে চিন্তা করলে মানুষ ভুল করবে, আমাদের বলতে অন্যান্য প্রাণ ও উপাদানকে নির্দেশ করে। আবার ‘চারপাশ’ মানে বিশ্বব্রহ্মান্ডের বিভিন্ন উপাদান ও সৃষ্টিকে নির্দেশ করে। পরিবেশকে ভালো ও নির্মল রাখতে হলে মানুষ যেমন তার মতো মানুষের প্রতি যত্নবান হতে হবে ঠিক তেমনি প্রকৃতির প্রতিটির সৃষ্টিকেও আপন করে নিতে হবে। কারণ পরিবেশের প্রতিটি উপাদানই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তবে প্রকৃতির উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষ পরস্পরের ওপর তখন বেশি নির্ভরশীল হবে যখন প্রকৃতিতে বৈচিত্র্য থাকবে সমৃদ্ধ। এই বৈচিত্র্যের বিভিন্ন উপাদানকে ঘিরে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী হয়। পারস্পরিরক সম্পর্ক শক্তিশালী হলে পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই ভালো থাকবে, বিকশিত হবে। যেমন, বিভিন্ন উদ্ভিদের ফল, ফুল আছে বলেই পাখিরা সেই উদ্ভিদের সংস্পর্শে আসে। সেই ফুল ও ফল খেয়ে বেড়ে উঠে। সেই উদ্ভিদের ফল ও ফুল খেয়ে মলের মাধ্যমে তারা অন্য এলাকায় এসব উদ্ভিদের জন্ম দেয়; বৈচিত্র্যকে আরও বিকশিত করে। আবার বনের বিভিন্ন ছোট ছোট উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে বলেই পোকামাকড় থেকে শুরু করে বড় আকারের প্রাণীগুলো সেই সব ছোট উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংস্পর্শে আসে; খাদ্য হিসেবে যেমন সেগুলো গ্রহণ করে তেমনিভাবে সেগুলোকে লালন-পালন করে যাতে তাদের খাদ্যের কোন সমস্যা না হয়। এভাবে তাদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান সেটা খাদ্য হোক, ওষুধ হোক, ফল হোক পরস্পরের সাথে বিনিময় ও সহভাগিতা করার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। ‘আমাদের’ ও ‘চারপাশ’ প্রত্যয়টি দু’টির বিশ্লেষণে আমরা বুঝতে পারি, ‘পরিবেশ’ মানে মানুষসহ প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ও প্রাণকে নির্দেশ করে। পরিবেশকে ভালো রাখতে হলে, সুস্থ রাখতে হলে এবং নির্মল করতে গেলে প্রতিটি প্রাণ ও উপাদানের প্রতি যত্নবান ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
২০১৭ সালের প্রতিপাদ্য বিষয়টিকে বাংলায় রূপান্তর করলে দাঁড়ায় ‘প্রাণের স্পন্দনে, প্রকৃতির বন্ধনে’। প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন তখন স্পন্দিত হবে যখন প্রকৃতিকে তার মতো করে থাকতে দিই আমরা। প্রকৃতির বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ করতে হলে অবশ্যই এসব প্রাণের স্পন্দনকে বাঁচাতে হবে, বিকশিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন প্রকৃতির আলিঙ্গনে নিজেকে সমর্পণ করা। আমরা মানুষ প্রকৃতির সন্তান, প্রকৃতির কোল থেকেই আমরা বেড়ে উঠি এবং বর্তমান সময়ের সভ্য মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছি।। কিন্তু সেই প্রকৃতি থেকে দিন দিন আমরা দূরে চলে যাচ্ছি। আমরা যারা শহরে থাকি প্রকৃতির সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগই নেই। আর আমরা যারা গ্রামে বাস করি আমরাও কেমন জানি দিনকে দিন প্রকৃতি থেকে দূরে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই সেটিও এতো বেশি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা যে তাতে প্রকৃতির স্বাদ-গন্ধও বিন্দুমাত্রও নেই। আমাদের গায়ে লাগে না কাঁদা-মাটি; পানিও পান করি বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও রাসায়নিক পদার্থ মেশানো। প্রতিদিন হাজারো তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু প্রকৃতি সম্পর্কে থেকে যাচ্ছি অজ্ঞ। নতুন কোন গাছ চিনি না, ধান চিনি না, মাছ চিনি না। অন্যান্য ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র উদ্ভিদ আর প্রাণীর কথাতো বাদই দিলাম। আমরা কি জানি আমাদের চারপাশে কত ধরনের রঙ-বেরঙের প্রজাপতি আছে? কত ধরনের পাখি আছে? কত ধরনের ঘাস আছে? প্রকৃতি থেকে এই দূরত্ব হয়তো আমাদেরকে আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর এবং প্রযুক্তি নির্ভরশীল করে তুলছে। আর তাই এই পরিবেশ দিবস হতে পারে আমাদের জন্য এক সূবর্ণ সুযোগ প্রকৃতিকে জানার, চেনার বুঝার।
চলুন না আজ বেরিয়ে পড়ি খালি পায়ে। সবুজ ঘাসের বুকে কিছুক্ষণ হাটি। লাগুক পায়ে কাঁদা। চিনে নিই নতুন একটি উদ্ভিদ প্রজাতিকে। চলুন না ঘুরে আসি সবুজের কাছকাছি কোন একটি বাগান কিংবা পার্কে চিনে নিই নতুন ১০টি গাছ, পাখি, পোকা, ফড়িং, প্রজাপতি। কিংবা পরিচিত হই এমন একজন মানুষের সাথে যিনি প্রকৃতির সাথে একীভূত। তার সাথে গল্প করে জেনে নিই প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য। হারিয়ে যাই প্রকৃতির মাঝে, বিলীন হয়ে যাই।
হ্যাঁ, জানি এই একটি দিবস যথেষ্ট নয় প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার জন্য। কিন্তু শুরুটা তো হতে পারে এই দিনেই। সবাইকে পরিবেশ দিবসের ২০১৭ এর শুভেচ্ছা।
বাহাউদ্দীন বাহার ও সিলভানুস লামিন
লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় barciknews.com এ 

ঝুম বৃষ্টি


যে ভালোবাসায় অশ্রু থাকে- 
সে কি আর ভেজে বরষায়?
যে ভালোবাসায় আগুন জ্বলে-
সে কি আর পোড়ে দাবদাহে? 
যে ভালোবাসায় মরে আলিঙ্গনে-
সে কি ভয় পায় ঠাণ্ডায়? 
যে ভালোবাসা উৎসবে ভরে থাকে
নবান্ন কি তার ছাড়ে পিছু।

সকল ঋতুই ভালোবাসার জন্য যথার্থ। কিংবা ভালোবাসা কি অপেক্ষা করে কোন ঋতুর। 
ভালোবাসার চারটি হাত আর দুটি হৃদয়ই মুখ্য। আর সবকিছুই গৌণ।

শুভ জন্মদিন


দামী তুমি অনেক দামী তোমার নামের মতো!
মূল্য যে পায় তোমার ছোঁয়ায় মূল্যহীন যতো।

সাগর সেঁচে মুক্তা কুড়াও ভুলিয়ে দাও ক্ষত-
অশ্রু বারি কপোল চুমে মুক্তা হয়ে ঝড়ুক অবিরত!

তোমায় পেয়ে ধন্য আমি- শোধ হবে না ঋণ-
ভালোবাসি; বাসবো ভালো চিরদিন।
ভালো থেকে, ভালো রেখো (সবাইকে)- শুভ জন্মদিন।