Search This Blog

তিনি একজন বন মানুষ!

তিনি একজন আপাদমস্তক বন মানুষ! অন্যভাবে বললে বন প্রেমিক মানুষ। তিনি একা একটি বন তৈরি করেছেন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন একা। একটি বন। যার আয়তন ১৩৬০ একর। যা ভারতের জাতীয় উদ্যানের চেয়ে দুই থেকে তিন গুন বড়। ৪ দশক ধরে তিনি একা একাই এই বিশাল আয়তনের বন গড়ে তুলেছেন। ওনার নাম যাদব মোলাই পায়েং (৫৪)। বনের নামও হয়েছে তার নামে ‘মোলাই কাথোনি’ অর্থাৎ মোলাইয়ের ঘর।
ব্রহ্মপুত্রের চর মাজুলি- মোলাই ফরেস্ট
১৯৭৯ সালের কথা। ওনার বয়স তখন ১৬-১৭ বছর। মেট্রিক পাস করে বাড়িতে বসে আছেন। বাড়ি পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদী। ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে উঠেছে চর। সেই চরে একদিন বেড়াতে গিয়ে দেখলেন চরের মাটিতে ছড়িয়ে আছে শত শত মৃত সাপ। বন্যার জলে ভেসে আসা সাপগুলো চরে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু নতুন এই চর একবারেই বিরান। চারিদিকে শুধু বালু আর বালু। নেই কোন গাছ কিংবা ঘাস। বিরান এই চরের বালি সূর্যের তাপে তেতে ওঠায় সাপগুলো মারা যায়। উল্লেখ্য, সেই বছর ভারতের আসামে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যার জলে অনেক বন্য প্রাণী মারা গেছে, নয়তো হয়েছে বাস্তহারা। ব্রহ্মপুত্র তখনও বেশ আগ্রাসী নদী। এ কূল ভেঙে ও কূল গড়ে। চর জাগলেও ভেসে যায়। ফলে চরগুলোর মাটি আলগা হয়ে পানির স্রোতে ভেসে যেত। এ কারণে কোনো উদ্ভিদও জন্মাতো না।
সাপগুলোর এই মৃত দেহগুলো কিশোর যাদব পায়েংকে বেশ ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল। মনে মনে এসব প্রাণীর জন্য একটি অভয়ারণ্য তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। এই সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনটাকে আমূলে বদলে দিল। এজন্য ঘর ছাড়তে হলো, ছাড়তে হলো গ্রাম। কিন্তু নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে সে শুরু করলন গাছ লাগানো। বিশাল সেই বিরানভূমিতে একা হাতে গাছ লাগিয়ে রীতিমতো একটি বনভূমি তৈরি করে ফেললেন তিনি। বর্তমানে তাঁর এই বনভূমিতে বিচরণ করে চিতাবাঘ, গণ্ডার, হরিণ, বাঁদর আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। প্রতি বছর হাতির একটি দল এই বনভূমিতে বিচরণ করতে আসে এবং বছরের ৬ মাস সময় এখানেই বাস করে তারা।

যাদব মোলাই পায়েং
যাদব মোলাই পায়েং জন্মগ্রহণ আসামের জোরহাট জেলার মিশিং সম্প্রদায়ে ১৯৬৩ সালে। পুরো নাম যাদব মোলাই পায়েং। সবাই তাকে মোলাই বলে ডাকে। বর্তমানে যাদব তার পরিবার নিয়ে মোলায় কাথোনিতেই বাস করেন। প্রায় ৫০টির মতো গরু-মহিষ আছে ওনার। এদের দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন আর বনের দেখাশোনা করেন যাদব।
এই বনটাই ওনার ধ্যান-জ্ঞান। তিনি গাছের যত্ন করেন। বনের গাছগুলো যত্ন নেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত মাটিতে পিঁপড়া, কেঁচো ইত্যাদি পোকামাকড় ছেড়ে দেন মাটি উর্বর করার জন্য। প্রতিদিন বনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে দেখাশোনা করেন তিনি। কোন গাছের কী অবস্থা?  কোনো প্রাণী আহত হলো কিনা? কিংবা বনের কোথাও কেউ গাছপালা কাটছে কিনা? সব খবরই রাখেন যাদব। এজন্য কোনোদিন কোনো আর্থিক সহায়তা তো দূরে থাক, উৎসাহটুকুও পাননি। বরং গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পেয়েছেন অবহেলা। শুধুমাত্র উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই সৃষ্টি করেছেন এমন বনাঞ্চল।
বন যত বড় হচ্ছিলো, যাদব পায়েংকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছিলো। যেমন- মোলাই কাথোনিতে চরতে আসা হাতির দল গ্রামবাসীদের ক্ষেত খামার নষ্ট করে দিয়ে চলে যেত। এতে গ্রামবাসীরা এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিল যে, তারা যাদবের বন উজাড় করে দেবে বলে হুমকি দিত। যাদব সেই হুমকিতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে একটি বুদ্ধি বের করলেন। তিনি জানতেন, হাতি কলাগাছ পছন্দ করে। যাদব বেশি করে কলাগাছ লাগালেন বনে। ব্যস, হাতির দল কলাগাছ পেয়ে সন্তুষ্ট। তাই ক্ষেত খামারের দিকে পা বাড়ালো না আর।
আরেকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন যাদব; যার সমাধান আজ পর্যন্ত করতে পারেননি। সেটি হলো বনের গাছ কেটে ফেলা। যাদব ‘মোলাই কাথোনি’তে অনেক সেগুন ও মেহগনি গাছ লাগিয়েছিলেন। যার বাজার মূল্য সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। জানবেনই বা কীভাবে?  তার তো আর টাকার লোভ নেই। তিনি আজ পর্যন্ত বনের কোন গাছ কাটেননি; বিক্রি করা তো দূরে থাকুক। কিন্তু অর্থলোভী মানুষ জানে সেসব গাছের মূল্য। ফল যা হবার তাই হলো। প্রায়ই বনের গাছ কেটে নিয়ে যেতে চায় তারা। অর্থলোভী এই মানুষগুলো শুধু গাছ কেটে ক্ষান্ত হতো না। বন্যপ্রাণীদের উপরও হামলা করতো। খুব স্বাভাবিকভাবে এত বড় বন যাদবের একার হাতে রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব কঠিন ছিল। তাই গাছ কাটা ও বন্যপ্রাণী হত্যার ব্যাপারে বন মন্ত্রণালয়কে জানান তিনি। তারা প্রথমে কর্ণপাত না করলেও পরবর্তীতে আরো কিছু দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে সেখানে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দিয়েছে। এই বনের প্রতিটি গাছ যেন তার একেকটি সন্তান। তাইতো তিনি বলেন, “এই বনের গাছ কাটার আগে যেন তারা আমাকে কাটে”।
যাদব পায়েংকে খুঁজে বের করেন ভারতীয় ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার জিতু কালিতা। ২০১০ সালে তিনি ছবি তোলার জন্য মোলাই কাথোনির রুক্ষ চরে এসে পৌঁছান। চরে নেমেই খেয়াল করেন, খানিকটা দূরে বেশ ঘন বন। তিনি ভাবলেন, এমন রুক্ষ চরে বন এল কোথা থেকে? তারপর ধীরে ধীরে খুঁজে পেলেন যাদবকে। যাদব তো তাকে দেখে তেড়ে মারতে আসেন। উনি ভেবে ছিলেন জিতু একজন বন্য প্রানি শিকারি। পরে অবশ্য জিতু যাদবকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জিতু পত্রিকায় যাদবকে নিয়ে লিখলেন। একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করলেন তাকে নিয়ে। ধীরে ধীরে সারা ভারত সহ সারা পৃথিবী তাকে চিনতে শুরু করলো।

ভারতের রাস্ট্রপতি আবুল কালাম আজাদ এর কাছে পুরষ্কার গ্রহণের সময়।
বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে ২০১২ সালে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় যাদব পায়েংকে একটি সংবর্ধনা দেয়। সেখানে তিনি বলেন, “আমার বন্ধুরা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে, শহরে বাস করে। আমি আমার সাধ-স্বপ্ন সবকিছু বিসর্জন দিয়েছি এই বনটার জন্য। আজ এই বন আমার ঘর। আজকের এই সংবর্ধনা, এই পুরস্কার আমার সম্পদ। আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী একজন মানুষ।” ২০১৩ সালের অক্টোবরে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সুধির কুমার তাকে ‘ভারতের বনমানব’ (Forest Man of India) উপাধি দেয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পদক দেয়া হয় তাকে। এত এত পদক আর সম্মাননার পরও যাদবের একটাই স্বপ্ন, মৃত্যুর আগে ভারতে মোলাই কাথোনির মতো আরও বন তৈরি করে যাবেন।
একজন মানুষ একা একা একটি ১৩৬০ একর বিশাল আয়তনের বন সৃষ্টি করেছেন। শুধু একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। কতটা ভালোবাসা আর আন্তরিকতার সাথে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রকৃতি প্রেমী- নিঃস্বার্থভাবে। একজন মানুষের একার পক্ষে পুরো সমাজটা বদলে দেয়া সম্ভব না। কিন্তু একজন মানুষের প্রতিদিনকার ছোট ছোট কাজ একদিন একটা বিশাল পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সেটারই একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত যাদব মোলাই পায়েং এর বন মোলাই কাথেনি।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে যাদব পায়েং এর এই বন যেহেতু একটি চর তাই যেকোন সময় এটি তলিয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তেমনটাই বলছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে হুমকির মুখে পড়বে এই বন। তাই যাদবও বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে তিনি এই বন রক্ষার জন্য বেশ নতুন নতুন চিন্তা করছেন। তিনি যেখানেই যান তার এই চিন্তা গুলো তাদেরকে শোনান। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তাই তো তিনি এখন বিভিন্ন পুরষ্কার আর সংবর্ধনা নিতে যান না। বিরক্ত প্রকাশ করেন। তিনি হয়তো যতদিন বেঁচে থাকবেন এই মোলাই বনকে বুকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন।
যাদব মোলাই পায়েং খুবই সাধারণ একজন মানুষ। কিংবা আমার আপনার চেয়ে অনেক নগণ্য। তবুও তিনি আমার আপনার মতো কোটি মানুষের চেয়ে অনন্য। তিনি সমস্যা দেখে বসে থাকেননি। তার সামর্থ এর চেয়ে অনেক বেশি করেছেন। হয়ে উঠেছেন একটি বনের পিতা। আবার সম্মানের দিক থেকেও তার অর্জন কিন্তু অনেক। তার যে সমস্ত বন্ধুরা আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তারা আদৌও রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার পাবেন কিনা তার ঠিক নেই। তাই কোন কাজই কিন্তু ছোট না। যেকোন কাজ নিষ্ঠা আর একাগ্রতার সাথে করলে একজন সাধারণ যাদব মোলাই পায়েংও হয়ে উঠতে পারে বিশ্ব ইতিহাসের পাতায়। তার সম্পর্কে গুগল কিংবা ইউটিউব এ সার্চ দেন। দেখবেন তিনি কে? তিনি একজনই যাদব মোলাই পায়েং- The Forest Man of India (ভারতের বনমানব)।
* ছবি গুলো ইন্টারনেট এর মুক্ত সোর্স থেকে নেয়া।
**লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় বারসিক নিউজ ডট কম এ। 

কেস স্টাডি- অ আ ক খ


কেন লিখবো?

 
কাকে বলে (সংজ্ঞা)?

এমন একটি অধ্যয়ন (গবেষণা/ সমীক্ষা) যা ফলাফলের পিছনের গল্পকে অতি সূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে, সমন্বয় করে উপস্থাপন করে। এটি বিশ্লেষনের এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে প্রকল্পের সফলতা গুলোকে তুলে ধরা সম্ভব হয়। কখনো কখনো এটির মাধ্যমে কারো কোন একটি নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ বা সমস্যায় কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কেস স্টাডি কোন সমস্যার বর্ণনা হতে পারে যা সমাধান করা প্রয়োজন কিংবা কোন সফলতার ঘটনাও হতে পারে যা সবার কাছে প্রচার করা দরকার। কেস স্টাডি হচ্ছে একটি গুনগত গবেষণা পদ্ধতি।




কোন বিষয়ের কেস স্টাডি লিখবো?
·        কোন বিশেষ একটি ঘটনা বর্নণা করার জন্য উপযুক্ত (perfect) এবং প্রতিনিধিত্ব মূলক (representative);
·        নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির পর্যাপ্ত উপাদান রয়েছে;
·        খুব অল্প সময়ে পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারবে এমন বিষয়;
·        কোন একটি ঘটনা বা বিষয়ের সহজ, সাবলীল এবং কার্যকরী চিত্র (প্রতিকৃতি) তুলে ধরতে পারবে;

যখন কেস স্টাডি অত্যাবশ্যকীয়
·        যখন একটি অনন্য (unique) এবং আগ্রহোদ্দীপক (Interestingগল্প বলার দরকার পড়ে;
·        যখন একটি গল্প কাংখিত ফলাফলের কাছাকাছি পৌঁছাতে বা প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে;
·        যখন এটি কোন প্রোগ্রাম কি ঘটেছে, কেন ঘটেছে এই সমস্ত বিষয়ের থেকে আরও অনেক বেশি কিছু (সম্পূর্ণ গল্প) বর্ণনা করতে পারবে;

কেস স্টাডি লেখার ধাপ সমূহ
ক্রম
কাজ
মন্তব্য
1.       
কোন ব্যক্তি, দল বা বিষয় নির্বাচন করুন যার উপর আপনি কেসস্টাডি লিখতে চান। সাধারণত আপনি তখনই একটি কেসস্টাডি লিখতে চাইবেন, যখন আপনি একটি কেসস্টাডির মূল বিষয়বস্তু ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছেন।

এ ক্ষেত্রে আপনার কর্মএলাকার বিভিন্ন কার্যক্রম, প্রতিবেদন এবং ফলাফল এর উপর ভিত্তি করে কেস স্টাডির বিষয় নির্বাচন করুন।
2.      
কেস সম্পর্কিত গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করুন। প্রশ্ন বা আলোচনার বিষয়বস্তু তৈরি করুন। এর যথার্থতা যাচাই করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু করুন।

অন্যান্যদের সহায়তায় একটি চেকলিস্ট তৈরি করুন। তার সহযোগিতা নিন। অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। যে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ
3.      
যখন প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষ হবে তখন সকল তথ্য সংকলন করুন এবং কেসস্টাডি লেখা শুরু করুন।

ভেবে দেখুন এ কাজের জন্য আপনার দলের সেরা সহকর্মী কে হতে পারে?
4.       
 আপনার কেসের একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম দিন
ঘটনার পটভূমি লিখুন
কেসের মূল অংশে বিষয়টির অনন্যতা বা পরিবর্তনের তথ্য সন্নিবেশিত করুন এবং ঘটনার সত্যতা ফুটিয়ে তুলুন
কেসের উপসংহার লিখুন
আপনার লেখার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক ও উর্দ্ধতন ব্যবস্থাপকের সাথে আলোচনা করুন। আপনার বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে।
5.      
প্রথম খসড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এটি বার বার পড়–ন এবং সংগৃহিত তথ্যের গ্রহনযোগ্যতা (বৈধতা যাচাই করুন)। খসড়াটি পঠকের সহজে বোঝার জন্য প্রয়োজনে আবার লিখুন। যদি সম্ভব হয় সহকর্মীদের পড়তে দিন এবং তাদের মতামত গ্রহন করুন।
কেস স্টাডি এমন হতে হবে যেন এর মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো ফুটে উঠে অথবা পরিবর্তন বোঝা।


কিভাবে লিখবো?
ষড় 'ক' অনুসরণ করা। যথা- ১. কী? ২.কে? ৩.কোথায়? ৪. কখন? ৫. কেন? বিশেষ গুরুত্ব দিন- কীভাবে?




যে বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে?
·        আমি, তুমি, আমরা, তোমরা শব্দ না লিখে সে বা তিনি দিয়ে লিখুন;
·        নিজস্ব কোন মন্তব্য বা পরামর্শ লেখা যাবে না;
·        কোন বিশেষণ  (যেমন- খুব ভাল, আকর্ষনীয়, গরীব, ধনী, অসহায় প্রভৃতি) শব্দ লেখা যাবে না;

সংকলনে- বাহাউদ্দীন বাহার


মুদ্রার ওপিঠ

প্রতিটি মুদ্রার ২টি পিঠ-
আমরা একসাথে দুইটা পিঠ একসাথে দেখতে পারি না। তাইতো আমাদের দেখার ধরনেই- বিশ্লেষণ বদলে দেয়।
আমি দেখি মাথা; তুমি দেখ লেজ
এই আধা দেখাই আমাদের নলেজ।
ভাবি তুমি দোষী- আমি নির্দোষ।
চোখ মুদে ঘুম দেই- সুখের আবেশ।
কেন তুমি করো এটা- যেটা আমি পারিনা-
তুমি শুধু জিতে যাও- আমি তবু হারি না।
ভুল বুঝে দূরে গেলে- ভুল ভাঙাবো না।
ভুল গুলো ভুল হয়ে ফুল ফুটবে না।

পলক মুচ্ছল একজন দেবীর কথা

কাল থেকে পলক মুচ্ছল শব্দটি মাথার ভিতর থেকে যাচ্ছেই না। একটা ঘোরের মধ্যেই আছি। কিভাবে সম্ভব? বয়স মাত্র ২৪। কিন্তু হাজার বছর বেঁচেছেন এর মধ্যে। কিংবা বলা যায় হাজার বার জন্ম নিয়েছেন হাজার খানিক জীবন বাঁচিয়ে।
কিশোরী পলক মুচ্ছাল 

৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত তিনি গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে বাঁচিয়েছে ১৩৩৩ টি শিশুকে। যাদের সকলেই হার্ট এর অসুখে ভুগতেছিল। এদের সবাইকে অপারেশন এর মাধ্যমে সুস্থ্য করা সম্ভব হয়েছে। ভারতের প্রায় সকল শহর সহ পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে মঞ্চে গান পরিবেশন করে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সেই অর্থ দিয়ে বাঁচিয়েছে এবং বাঁচাচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের। এই বিশেষ অবদানের জন্য ইতোমধ্যেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এবং লিমকা বিশ্ব রেকর্ড এ তার নাম উঠেছে এই অনবদ্য এবং অনন্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ। এছাড়াও ভারতীয় নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে সে।  
একবার চিন্তা করুন যখন আপনার আমার বয়স মাত্র ১১ বছর। তখন আমরা কি করতাম? নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়ে খেলতাম আর খেলতাম। আর এই মেয়েটি তখন ১০০ এর বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত বাচ্চাকে অপারেশন এর মাধ্যমে সুস্থ্য করে তুলছে। শুধু তাই নয় অপারেশন এর সময় সে অপারেশন থিয়েটারের রোগির পাশে থেকে প্রার্থনা করতো। ডাক্তাররা তাকে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করার অনুমতিই দিতেন না- পাশাপাশি ঐ ছোট্ট মেয়েটির জন্য ছোট্ট অপারেশন অ্যাপ্রোনও রাখতেন। এই কাজের বিনিময়ে সে ঐ পরিবার এর কাছ থেকে ১ টি করে পুতুল ছাড়া আর কিছুই নিতো না। একবার ভাবুন তো ঐ পরিবার গুলোর কাছে এই ছোট্ট মেয়েটি কে? দেবী ছাড়া কি! সৃষ্টিকর্তা তাকে পাঠিয়েছেন বুঝি এই কাজের জন্য। তাইতো শিল্প-সংগীত এর ছোঁয়াও নেই এমন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও নিজের কণ্ঠ দিয়ে বাঁচাচ্ছেন হাজারো দরিদ্র হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের। সে একজন কন্ঠ দেবী- স্বরস্বতী!     
নাম তার পলক মুচ্ছল। জন্মেছেন ভারতের মধ্য প্রদেশ এর ইন্দোর শহরে একটি মাড়োয়ারি পরিবারে। চাকুরীজীবী বাবা আর গৃহিণী মা বাবার মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৯২ সালের ৩০ মার্চ মাসে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন পলক মুচ্ছল। একটি ছোট ভাইও রয়েছে। পরিচয় তার বলিউডের প্লেব্যাক সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। যদিও তার পরিবারের কারোর সাথেই সঙ্গীতের কোন যোগাযোগ নেই। মেয়েটির  বয়স যখন আড়াই বছর- হঠাৎ একদিন পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে সবাই যখন কিছু না কিছু পরিবেশন করছে।তখন মেয়েটি তার মায়ের কাছে মিনতি করলো কিছু পরিবেশন করবো বলে। মা ভাবল মেয়েটি কোন ছড়া বা কবিতা বলবে। কিন্তু মঞ্চে উঠে মেয়েটি গান পরিবেশন করলো। মা তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে গান শেখাবেন। মেয়েটির বয়স যখন চার বছর তখন সে আনন্দ-কল্যাণজি লিটল স্টার নামের সংগঠনের সদস্য হলো।
অপারেশনে সুস্থ্য হওয়া একজন শিশুর সাথে হাসপাতালে 

১৯৯৯ সাল মেয়েটির বয়স তখন সাত বছর। তখন ভারতে শুরু হল কারগিল যুদ্ধ। মেয়েটির মা মেয়েটিকে পত্রিকা থেকে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সৈনিকদের দুর্দশার কথা পড়ে শোনাতেন। মেয়েটির কোমল হৃদয় কেঁদে উঠলো। ভাবল শুধু ঘরে বসে না থেকে তার কিছু করার রয়েছে। একটি দানের বক্স নিয়ে দোকানে দোকনে গিয়ে বলল, “আমি আপনাদের একটি গান শোনাবো। বিনিময়ে আপনার যা খুশি কিছু এই বক্সে দান করবেন।’’ মেয়েটি গান গেয়ে গেয়ে সেই সময়ে ২৫ হাজার ভারতীয় মুদ্রা সংগ্রহ করলেন এবং সুনির্দিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে সেটি জমা দিলেন। এই খবরটি স্থানীয় মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। মেয়েটি পায় সামনে চলার এক অনুপ্রেরণা। একই বছর ভারতের অঙ্গরাজ্য ওড়িশ্যায় সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যের জন্যও গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। এগুলো হল মেয়েটির শুরুর গল্প। পাশাপাশি মেয়েটি প্রায় দেখতো তার বয়সী ছেলে মেয়েরা নিজের পড়নের পোশাক দিয়ে ট্রেনের বগি, গাড়ি প্রভৃতি ধোয়া-মোছা করে। তখন তার মনে ভাবনার উদয় হয়েছে যে, সে তার কণ্ঠ দিয়ে মানুষের সাহায্য করবে। সে তার বাবা-মাকে তার এই ইচ্ছার কথা জানালে তারা স্বানন্দে গ্রহণ করে। কাকতলিয়ভাবে সেই সময়কালে ইন্দোরের একটি স্কুলের একজন শিক্ষক তার স্কুলের লোকেশ নামের একজন হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য পলক এর পরিবারের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তখন মেয়েটি লোকেশের জন্য একটি ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে সেখানে গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। ২০০০ সালের মার্চ মাসে বেশ অনেক গুলো মঞ্চ পরিবেশনার পর ভারতীয় মুদ্রায় ৫১ হাজার রুপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। মেয়েটির এই কাজ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে কারডিওলজিস্ট দেব প্রসাদ শেটি লোকেশের বিনামুল্যে অপারেশন করেন। পলক এবং তার পরিবার চিন্তায় পড়ে গেল এই টাকা কি করবে? তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন যে, যদি কোন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে যেন অতিসত্তর যোগাযোগ করে।  পরের দিন ৩৩ জন শিশুর পরিবার যোগাযোগ করে- যাদের প্রত্যেকের হৃদরোগের অপারেশন করা লাগবে। পলক এবং তার পরিবার খুবই চিন্তায় পড়ে যান। এতো শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত।
শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া পুতুলের সাথে পলক 
তারা এই সমস্ত শিশুদের অপারেশন করার জন্য ঐ বছরই একাধিক মঞ্চ পরিবেশনা করে এবং প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার ভারতীয় মুদ্রা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এই টাকা দিয়ে ৩৩ জনের তো সম্ভব হয় নি। কিন্তু ৫ জন শিশুর অপারেশন সম্ভব হয়। শুরু হয় পলক মুচ্ছলের শিশুদের বাঁচানোর এক অনন্য অভিযানের কথা।
পরবর্তী বছর ২০১১ সাল থেকে সারা ভারতে মঞ্চে গান পরিবেশনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে “পলক মুচ্ছল হার্ট ফাউন্ডেশনের” মাধ্যমে শিশুদের সুস্থ্য করে তুলছেন। উল্লেখ্য, তাদের এই মঞ্চ পরিবেশনের নাম ‘দিল সে দিল তাক’। বাংলায় হৃদয় থেকে হৃদয়ে। আর ইংরেজীতে `Save Little Heart’. মঞ্চে পলক মুচ্ছলের সাথে তার ছোট ভাই পলাশ মুচ্ছলও পরিবেশন করে। একটি মঞ্চ পরিবেশনায় পলক গড়ে প্রায় ৪০ টি গান পরিবেশন করে। কিছু তার নিজের গান। আর কিছু সিনেমার জনপ্রিয় গান। পলক মুচ্ছল প্রায় ১৭টি ভাষায় গান গাইতে পারে। বর্তমানে সে বলিউড সিনেমার জনপ্রিয় একজন প্লেব্যাক সঙ্গীত শিল্পী।

মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন পলক মুচ্ছাল

পলক গান গেয়ে যতো টাকা উপার্জন করে তার সবটুকুই সে তার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র শিশুদের চিকিৎসার কাজে ব্যয় করে। আগে যেখানে একটি শিশুর অপারেশনের জন্য একাধিক মঞ্চ পরিবেশনা করতে হতো। বর্তমানে এখন ১ টি মঞ্চ পরিবেশনা থেকে ৭-৮টি শিশুর অপারেশন করা সম্ভব হয়। ব্যস্ততার কারণে এখন সবগুলো অপারেশনের সময় শিশুটির পাশে না থাকতে পারলেও- প্রতিটি অপারেশনের সময় সে প্রার্থনায় বসে প্রার্থনা করে।
ভাবতে অবাক লাগে যে বয়সে একটি মেয়ের পুতুল খেলে সময় পার করার কথা- তখন পলক শিশুদেরকে সুস্থ্য করে তুলে সে পরিবারের কাছ থেকে একটি করে পুতুল উপহার হিসেবে গ্রহণ করে। তাকে তার শৈশব কাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলে, “ঠিক আছে, যদিও আমি আমার শৈশব হারিয়েছি। বন্ধুদের সাথে খেলার চেয়ে একটি জীবন বাঁচান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।“     
পলক মুচ্ছলকে আগে থেকে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে জানলেও তার এই অনন্য কাজ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি দুইদিন আগে। তারপর থেকে ঘোরের মধ্যে আছি। কিভাবে সম্ভব- একজন ৭ বছরের শিশুর মধ্যে এই বোধ জাগ্রত হওয়া? কাল যখন আমি আমার স্ত্রীর সাথে এই গল্প শুনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- বলতো ঐ পরিবার গুলোর কাছে পলক মুচ্ছল কে? সে ছলছল চোখ বলল, “একজন দেবী”।

হে দেবী! তুমি বেঁচে থাকো হাজারো বছর। বেঁচে থাকুক তোমার কণ্ঠ। আরা বেঁচে থাকুক আরো লক্ষাধিক প্রাণ তোমার কন্ঠের বিনিময়ে। 

**লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় বারসিকনিউজডটকম