Search This Blog

গবেষণা

অভিজিৎ রায়, সহকারী অধ্যপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

গবেষণা কি?
সাধারণ অর্থে গবেষণা জ্ঞানের অনুসন্ধানের অন্তর্ভুক্ত। গবেষণাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট তথ্য লাভের বৈজ্ঞানিক এবং পদ্ধতিগত অনুসন্ধানও বলা যায়। আসলে, গবেষণা হল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি শিল্প।
Redman এবং Mory গবেষণাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন ‘‘নতুন জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতিমূলক চেষ্টা
কিছু ব্যক্তিরা মনে করেন গবেষণা একটি ধারা, অজানা থেকে জানার দিকে ধাবিত একটি গতি। গবেষণা একটি প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম, এমনকি কৌশলগত ধারণার ক্ষেত্রে এই টার্মটি ব্যবহার করা উচিত।
Clifford Woody এর মতে, ”গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হল সমস্যার সংজ্ঞায়ন ও পুন:সংজ্ঞায়ন, পূর্বানুমান তৈরি অথবা সম্ভাব্য সমাধানগুলো সংগ্রহ করা, সংগঠন করা ও প্রাপ্ত তথ্যের মূল্যায়ন করা; অবরোহ তৈরি করা ও ফলাফলে পৌঁছানো এবং পরিশেষে ফলাফল সাবধানে পরীক্ষা করার মাধ্যমে সংগঠিত পূর্বানুমানের সাথে খাপ খায় কিনা তা নির্ধারণ করা। (Kothari 2004:1)

কেন গবেষণা?
  • কিছু সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে জ্ঞান লব্ধ আনন্দ পাওয়ার ইচ্ছা,
  • সমাজের সেবা করার ইচ্ছা,
  • প্রায়গিকভাবে কোন সমস্যার সমাধান খোঁজার ইচ্ছা,
  • একটি গবেষণার ডিগ্রী অর্জন এবং ফলাফলসরূপ লাভের ইচ্ছা,
  • শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার ইচ্ছা,
  • পুরাতনকে খোঁজা এবং নতুনকে সনাক্ত করা,
  • জনমত তৈরীর জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম,
  • বিদ্যমান কোন বিষয়ের সত্যতা যাচাই করা।
গবেষণার লক্ষ্য কি?
গবেষণার উদ্দেশ্য হল বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া প্রয়োগের মধ্য দিয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর আবিস্কার করা।গবেষণার মুল লক্ষ্য লুকিয়ে থাকা সত্যকে,যা এখনও আবিস্কৃত হয়নি তা খুঁেজ বের করা।যদিও প্রতিটি গবেষণা অধ্যায়নের কিছু নির্দিষ্ট  লক্ষ্য থাকে,নি¤œ উল্লেখিত ভাগগুলোকে বিস্তারিতভাবে গবেষণার লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিতে পারি-
  • একটি প্রপঞ্চ সর্ম্পকে পরিচিতি লাভ করা অথবা তার মধ্য দিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা।
  • একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি, অবস্থা ও দলের বৈশিষ্ট্যসমূহের বর্ণনা করা।
  • কোন কিছু ঘটে যাওয়ার মাত্রা অথবা তার সাথে সর্ম্পকিত অন্য কিছুকে নির্ধারণ করা।
·         চলকগুলোর মধ্যে অপরিকল্পিত সর্ম্পকগুলোকে পুর্বানুমান করার জন্য পরীক্ষা করা। (Kothari 2004:2)

গবেষণায় মূলত ৮ ধরনের লক্ষ্য হতে পারে-
  • আবিস্কার
  • বর্ণনা
  • বোঝাপড়া
  • ব্যাখ্যা
  • অনুমান
  • পরিবর্তন
  • মূল্যায়ন
  • প্রভাবসমূহ নির্ধারণ
গবেষণা নকশা তৈরী :
একজন গবেষককে বা গবেষক দলকে একটি গবেষণা কর্ম পরিচালনার পূর্বে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়।

গবেষণার তাৎর্পয কি?
  • পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
  • কোন প্রপঞ্চ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দান করতে পারে।
  • সমাজ সংস্কারমূলক কাজে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।
  • মানুষের মূল্যবোধ, অভিমুখীনতা ও কুসংস্কারকে দূরীভূত করতে প্রয়োজনীয় ঐক্যমতের ভিত্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে।
  • প্রযুক্তির বিকাশ, গ্রহণ ও স্থায়িত্ব প্রদানে সামাজিক সহায়তার ভিত্তি প্রস্তুত করতে পারে।
  • বিজ্ঞানের ও বিশ্বাসের সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তি ও দ্বন্দ্বকে মূল্যায়নের মাধ্যমে বিজ্ঞানের দর্শন ও বিজ্ঞানের সমাজতত্ত্ব বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে।
  • প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মত সঠিক ও যথেষ্ট ভবিষ্যতবাণী করতে না পারলেও সীমিত ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতবাণী করতে পারে।



সামাজিক গবেষণা:
সামাজিক গবেষণা কি?
সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাকে বুঝানো হয়ে থাকে। সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিষয়বস্তু মানুষ, মানুষের মন, মানুষের সমাজ, মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের অর্থনীতি, মানুষের রাজনীতি প্রভৃতি। মোট কথা মানুষ, তার আচরণ ও ক্রিয়া, এবং মানুষের সমাজ-সংগঠন সামাজিক বিজ্ঞানীদের সাধারণ বিষয়বস্তু। একারণে সামাজিক গবেষণা বলতে শুধু সমাজতাত্ত্বিক গবেষনাকে ধরে নেয়া ঠিক নয়। তাছাড়া, সামাজিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি এবং পদ্ধতিতত্ত্বে যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকায় সামাজিক গবেষণা বিষয়ক আলোচনায় সাধারণত ব্যাপক দৃষ্টিকোণ লক্ষ্য করা যায়। আমরা সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার উপর কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ গুরত্ব দিলেও এখানে সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাকেই বুঝানো হবে। বলা বাহুল্য, সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিষয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেই বুঝতে হবে। (মুহাম্মদ হাসান ইমাম ১৯৯৮:১০৬)
সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্য:
সামাজিক গবেষণার কতক বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যদিও একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সব প্রাকৃতকি বিজ্ঞানেও অনেকগুলো অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নি¤œ প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হল:
  • সামাজিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক
  • সামাজিক গবেষণা দু ইবা ততোধিক চলকের (variable) মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করে
  • সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করে
  • সামাজিক গবেষণা বাস্তব তথ্য নির্ভর
  • সামাজিক গবেষণা ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল
  • সামাজিক গবেষণা সঠিক তত্ত্ব গঠনে ব্যাপ্ত
  • সামাজিক গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুসরণ করে।
(ড. খুরশিদ আলম ২০০৩:৯২)
সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ:
কোন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা বা কোন অজানা বিষয়ে জানার চেষ্টা করা।  বস্তুত গবেষণাকে নি¤œক্ত প্রকারভেদে ভাগ করা যায়, যেমন:
  • মৌলিক গবেষণা (Basic or fundamental research)
  • ফলিত গবেষণা (Applied research)
  • কার্যোপযোগী গবেষণা (Operational research)
  • মূল্যায়ন গবেষণা (Evaluative research)
  • পরীক্ষনমূলক গবেষণা (Experimental research)
  • জরিপ গবেষণা (Survey research)
  • মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানমূলক গবেষণা (Field investigative research)
(ড. খুরশিদ আলম ২০০৩:৯৬)
মৌলিক গবেষণা:
যে গবেষণার দ্বারা কোন তত্ত্বের ও পূর্বানুমানের উন্নয়ন ও পরীক্ষা করা হয় অনুসন্ধানকারীর জ্ঞানের স্থান পূরণের উদ্দেশ্যে এবং যার কিনা ভবিষ্যতে সামাজিক প্রায়োগিক দিক থাকবে, কিন্তু বর্তমানের সমস্যা সমাধানের কোন প্রায়গিক দিক নেই তাই মৌলিক গবেষণা। (ড. খুরশিদ আলম ২০০৩:৯৭) এক কথায় বললে যে গবেষণার দ্বারা জ্ঞানের সংগ্রহ হয় জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে তাই মৌলিক গবেষণা।(Kothari 2004:3) বস্তুত মৌলিক গবেষণা নি¤œবর্ণিত দুটি কাজ সম্পন্ন করে।
১.    নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার
২.    বিদ্যমান তত্ত্বের উন্নয়ন

ফলিত গবেষণা:
ফলিত গবেষণা হচ্ছে সেই গবেষণা যার দ্বারা সামাজিক সমস্যা সমাধান সম্ভব, যে সমস্যাগুলো সমসাময়িক উদ্বিগ্নের বিষয়। অর্থাৎ ফলিত গবেষণার লক্ষ্যই হচ্ছে সেই সকল সমস্যা সমাধান পাওয়া যা কিনা কোন সমাজ বা প্রতিষ্ঠানে ঘটছে। (Kothari 2004:3) তাত্ত্বিক গবেষণা ও ফলিত গবেষনা পরষ্পর সম্পর্কিত, কারণ তাত্ত্বিক গবেষণা ফলিত গবেষণার পথপ্রদর্শক।
কার্যোপযোগী গবেষণা:
কার্যোপযোগী গবেষণা হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিসরের কোন সমস্যা সমাধান ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয়। ফলিত গবেষণার সাথে এর মৌলিক পার্থক্য হল কার্যোপযোগী গবেষণা সম্পাদিত হয় ক্ষুদ্র পর্যায়ে আর ফলিত গবেষণা সম্পাদিত হয় বৃহৎ পর্যায়ে।  (ড. খুরশিদ আলম ২০০৩:৯৮)
মূল্যায়ন গবেষণা:
মূল্যায়ন গবেষণা পরিচালিত হয় কোন কিছুকে যেমন উন্নয়ন কর্মসূচী ও প্রকল্পকে মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ যে গবেষণা দ্বারা কোন প্রকল্পের কার্যকারিতা দেখা হয় তাই মূল্যায়ন গবেষণা।
পরীক্ষণমূলক গবেষণা:
পরীক্ষণমূলক গবেষণা হচ্ছে একটি স্বাধীন চলককে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে, যখন অন্যান্য অধীন চলকের উপর এর প্রভাব দেখা হয়। আর এখানে নিয়ন্ত্রণে রাখার অর্থ হচ্ছে ঐ চলকটিকে ধ্রব ধরা।

জরিপ গবেষণা:
জরিপ গবেষণা হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়, দল বা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা, আলোচিত বিষয় ও ঘটনার বিশ্লেষণ। আর সেই বিষয়গুলো হতে পারে কখনো মতামত যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আবার কখনো সমস্যা ধরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানমূলক গবেষণা:
গবেষক যখন কোন সমস্যা বা বিষয়কে নিয়ে জানতে গিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালান তখন তা মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানমূলক গবেষণা হয়।
(ড. খুরশিদ আলম ২০০৩:৯৮-১০১)


গবেষণার অন্যান্য শ্রেণী বিভাগ:
উপরে আলোচিত গবেষণার প্রকারভেদ ছাড়াও গবেষণাকে আরও শ্রেণীবিভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন:
·         বর্ণনামূলক গবেষণা বনাম বিশ্লেষণমূলক গবেষণা (Descriptive vs. Analytical research)
·         গুণগত গবেষণা বনাম পরিমাণগত গবেষণা (Qualitative vs. Quantitative research)
·         ধারণাভিত্তিক গবেষণা বনাম সরেজমিনে গবেষণা (Conceptual vs. empirical research)
বর্ণনামূলক গবেষণা বনাম বিশ্লেষণমূলক গবেষণা:
বর্ণনামূলক গবেষণার দ্বারা বিভিন্ন জরিপ এবং অনুসন্ধান চালানো হয় বিভিন্ন ঝটনা উৎঘাটনের জন্য। এই গবেষণার লক্ষ্য হল বর্তমানে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে বর্ণনা করা। আর এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, এই গবেষণায় গবেষকের চলকের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কেবলমাত্র বর্ণিত হয় যা ঘটেছে বা ঘটে চলছে। অন্যদিকে বিশ্লেষণমূলক গবেষণা হচ্ছে  যেখানে আগেই ঘটনা উপস্থাপিত থাকে, আর এই গবেষণার দ্বারা সেই ঘটনার সূক্ষ্ম মূল্যায়ন ঘটে।

গুণগত গবেষণা বনাম পরিমাণগত গবেষণা:
গুণগত গবেষণা হচ্ছে যেখানে কোন কিছুর গুণকে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে পরিমাণগত গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যাবাচক পর্যালোচনা। অর্থাৎ সংখ্যাবাচক পর্যালোচনার মাধ্যমে কোন ঘটনা বা বিষয়কে ব্যাখ্যা করা। যা কিনা গুণগত গবেষণায় গুণকে পর্যালোচনা করা হয়।
ধারণাভিত্তিক গবেষণা বনাম সরেজমিনে গবেষণা:
ধারণাগত গত গবেষণার সাথে ভাবনা এবং তত্ত্ব সম্পর্কিত। এই গবেষণা সাধারণত দার্শনিক এবং চিন্তাবীদরা করে থাকেন, যার মাধ্যমে তাঁরা নতুন কোন তত্ত্ব বা বিদ্যমান কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করে থাকেন। অন্যদিকে সরেজমিনে গবেষণা হচ্ছে পুরোটাই অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে, কখনো কোন পদ্ধতি কিংবা তত্ত্বের উপর নির্ভরশীলতা ছাড়াই। ইহা তথ্য নির্ভর গবেষণা। (Kothari 2004:3-4)


গবেষণা প্রক্রিয়া:
  • গবেষণা সমস্যার সংজ্ঞায়ন
  • সাহিত্য পর্যালোচনা
  • অধ্যায়নের সামগ্রিকতা ও একক নির্ধারণ
  • পুর্বানুমানের আকার গঠন ও চলক নির্ধারণ
  • গবেষণা কৌশল ও পদ্ধতি নির্ধারণ
  • পরিসংখ্যানিক অথবা অন্য পদ্ধতি গ্রহণ
  • তথ্য সংগ্রহ
  • তথ্য বিশ্লেষণ
  • ব্যাখ্যা দেওয়া ও বিবরণী (Report) লেখা
গবেষণা সমস্যার সংজ্ঞায়ন:
সাধারণত গবেষণার সমস্যা হচ্ছে কোন গবেষক তাত্ত্বিক কিংবা বাস্তবিক অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে জটিলতায় পড়লে যা সমাধান বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। আর গবেষণার প্রথম ধাপই হচ্ছে গবেষণার জন্য সমস্যা নির্ধারণ এবং গবেষণার সমস্যাকে পরিষ্কাররূপে বর্ণনা করা। আর এই সমস্যা কখনো গবেষকের আগ্রহ থেকে আসে আবার কখনো তত্ত্বের উপরও নির্ভর করে। আর সমস্যার উপর নির্ভর করে গবেষণার ক্ষেত্র নির্বাচন করেন একজন গবেষক।

সাহিত্য পর্যালোচনা:
গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যেই মূলত  গবেষণায় সাহিত্য পর্যালোচনা করা হয়, কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরত্বপূর্ণ একটি কার্যকরী গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ করা। আর সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদপত্র, সম্মেলনের আলাপ-আলোচনা, সরকারি প্রতিবেদন, বই, ইন্টারনেট ইত্যাদি পর্যালোচনা করা হয়। সাধারণত দুই ধরণের সাহিত্য পর্যালোচনা করা যায়, যেমন: তত্ত্ব ও ধারণা লব্ধ সাহিত্য এবং পূর্ব অভিজ্ঞতালব্ধ অধ্যয়নের সাহিত্যসমূহ।
অধ্যায়নের সামগ্রিকতা ও একক নির্ধারণ:
তথ্য সংগ্রহের পূর্বেই আমাদের অধ্যায়নের সামগ্রিকতা ও একক নির্ধারণ করতে হবে। অধ্যয়নের সামগ্রিকতা নির্ধারণের কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে  বাহ্যিক আকার এবং সামাজিক এককগুলো অধ্যয়ন করা সম্ভব হবে। যার জন্য করা হয়ে থাকে, প্রাক-অধ্যয়ন ও নমুনা নির্ধারনের মত বিষয়গুলো।
পুর্বানুমানের আকার গঠন ও চলক নির্ধারণ:
গবেষণার যৌক্তিকতা নির্ধারণের জন্য গবেষণার আপাত ধারণা নির্ধারণ করাই গবেষণার পূর্বানুমান বলা হয়। আর গবেষণার পূর্বানুমানের উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে গবেষণার অনুসন্ধানের পথনির্দেশক সরূপ। সাধারণত একটি পূর্বানুমানের কিছু চলক থাকে, যার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা দেখা হয়। আর সেই সম্পর্ক কখনো হয় ধণাত্মক, আবার কখনো ঋণাত্মক ও কখনো বা শূন্য।
গবেষণা কৌশল ও পদ্ধতি নির্ধারণ:
গবেষকের জানার আগ্রহের জায়গা সম্পর্কে অবগত হলে, গবেষকের পরবর্তি যে চিন্তা আসে তা হল কি করে আগ্রহের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। আর তখনই প্রয়োজন হয়ে পরে একজন গবেষককে গবেষণার কৌশল ও পদ্ধতি নির্ধারণের। উদাহরণ সরূপ: গবেষণার জন্য সামগ্রিক তথ্য আনয়নের জন্য প্রশ্ন পত্রের সরূপ তৈরি থেকে শুরকরে সাক্ষাৎকার গ্রহণের নানা কৌশল নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
পরিসংখ্যানিক অথবা অন্য পদ্ধতি গ্রহণ:
তথ্য সংগ্রহ:
কখনো সামাজিক গবেষণায় দরকার হয়ে পড়ে ভিন্ন সম্প্রদায়কে জানা, সেক্ষেত্রে গবেষককে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয় ভিন্ন সমাজে ঢুকার জন্য। তারপর গবেষক তথ্য সংগ্রহ শুরকরেন, আর সেই তথ্য হয় দুই ধরণের। যেমন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক তথ্য। প্রাথমিক তথ্য হচ্ছে যা গবেষক তার গবেষণা ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করেন, আর মাধ্যমিক তথ্য হচ্ছে যা গবেষক কোন মাধ্যমিক উৎস (বই, ইন্টারনেট..) থেকে সংগ্রহ করেন।
তথ্য বিশ্লেষণ:
তথ্য সংগ্রহের পর একজন গবেষক তথ্যের বিশ্লেষণ করে থাকেন। আর তখন পড়ফরহম, ঃধনঁষধঃরড়হ এর মত কৌশলগুলো অবলম্বন করেন একজন গবেষক তথ্যকে বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে। মাঝে মাঝে তথ্য সংগ্রহের ধরণই ঠিক করে দেয় যে তথ্য বিশ্লেষণ কিরূপ হবে।
ব্যাখ্যা দেওয়া ও বিবরণী (Report) লেখা:
গবেষণার ব্যাখ্যা বা বিবরণী লেখার সময় গবেষককে গবেষণার নৈতিকতার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয়, আরও বিশেষ করে যখন গবেষণাটি হয় কোন স্পর্শকাতর বিষয়কে নিয়ে। যখন কোন সামাজিক বাস্তবতা উৎঘাটনে কোন গবেষক তাঁর গবেষণা করেন, তখন উচিত সেই সমাজের গোপনীয় বিষয় নিয়ে খেলা না করা, কারণ সেই জনগোষ্ঠী কেবলমাত্র গবেষকের কাছে অধ্যায়নের বিষয়বস্তু নয় তার থেকেও বেশি কিছু।
গবেষণার নৈতিকতা:
গবেষণার নৈতিকতার নিয়ম হিসাবে নিচে আলোচিত বিষয়গুলোকে ধরা হয়,
  • স্বেচ্ছামূলক অংশগ্রহণ। গবেষণায় অংশগ্রহণ কখনোই জোড় করে করানো যাবে না, এবং যদি কেউ অংশগ্রহণ করতেও আগ্রহী হয় তাহলে তাকে জানাতে তার গবেষণা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার অধিকারও তার আছে।
  • গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জানানো। যারা গবেষণায় অংমগ্রহণ করবে তাদের অবশ্যই গবেষণার প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্যে সম্পর্কে জানবে। তাছাড়া গবেষণায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, কেন তাদের এই গবেষণার সাথে জড়িত করা হচ্ছে এবং গবেষণার ফলাফল ব্যবহারের উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে তাদের জানানো হবে।
  • গবেষণায় অংশগ্রহণ কারীর ধারণার অবমূল্যায়ন না করা। গবেষণায় অবশ্যই অংশগ্রহণকারীর দেওয়া তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষ্যা করতে হবে যেন তথ্যের অবমূল্যায়ন না হয়।
গবেষণায় শুদ্ধতা। গবেষণার অবশ্যই একটা মান থাকবে যা গবেষণাকে অসততা থেকে

No comments:

Post a Comment